স্কটল্যান্ডে নববর্ষবরণ বছরের অন্যতম সেরা উৎসব হিসাবেই দেখা হয়। নববর্ষ নিয়ে এখানে মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনা চোখে পড়ার মত। স্কটল্যান্ডের নববর্ষ উদযাপন বা হগম্যানী নিয়ে লিখেছেন বদরুল হোসেন বাবু।
Table of Contents
- যুক্তরাজ্যের অন্তর্গত দেশ স্কটল্যান্ডে বছরের শেষ দিন উদযাপন এবং নববর্ষ বরণ এক বিশেষ উৎসব হিসাবে আয়োজিত হয়। তিনদিনব্যাপী এই বিশেষ উৎসব হগম্যানী ফেষ্টিভ্যাল নামে পরিচিত যা স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরায় বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়।
- অতিথিকে অবশ্য যেকোন একটি উপহার নিয়ে আসতে হয়। একসময় যদিও অতিথিকে হিসাবে কাঙ্খিত ছিলেন একজন লম্বা, গাঢ় এবং সুদর্শন কেউ, এখন অভ্যাগত যে কেউ সমান আতিথ্য পান।
বছরের শেষদিন পশ্চিমা দেশগুলোতে থার্টিফার্ষ্ট ডে বা নিউইয়ার্স ঈভ নামে পরিচিত। এই দিনটিকে ঘিরে সবার বেশ কৌতুহল থাকে। কে কীভাবে উদযাপন করবে তা বেশ আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখা হয়।
যুক্তরাজ্যের অন্তর্গত দেশ স্কটল্যান্ডে বছরের শেষ দিন উদযাপন এবং নববর্ষ বরণ এক বিশেষ উৎসব হিসাবে আয়োজিত হয়। তিনদিনব্যাপী এই বিশেষ উৎসব হগম্যানী ফেষ্টিভ্যাল নামে পরিচিত যা স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরায় বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়।
নতুন বছরের প্রথমদিনকে এখানে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। এটা ব্যাংক হলিডে বা রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন। এছাড়া এখানে কিছু সামাজিক রীতিও প্রচলিত আছে শত শত বছর ধরে।
বছরের শেষদিনে এখানকার অধিবাসীরা নিজেদের ঘর-দূয়ার বিশেষভাবে পরিচ্ছন্ন করেন। যেহেতু শীতপ্রধান দেশ তাই প্রত্যেকের ঘরেই একটি ফায়ারপ্লেস থাকে আগুন পোহানো কিংবা ঘর গরম রাখার জন্য। সেই ফায়ারপ্লেস এইদিন খুবই ভালভাবে পরিষ্কার করা হয়।
নতুন বছরকে আলিঙ্গন করার আগে চলতি বছরকে ভালভাবে সমাপ্ত করতে হয়। তাই এখানকার নিয়ম হল কারো ব্যক্তিগত ঋণ থাকলে সেগুলো বছর শেষ হওয়ার আগেই পরিশোধ করা বা হালনাগাদ করা।
স্থানীয় রীতিতে নববর্ষের প্রথম প্রহরে কারো বাড়িতে অতিথির আগমনকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। এই নিয়ম ফার্ষ্ট ফুটিং হিসাবে পরিচিত। বছরের প্রথম মেহমান হিসাবে কারো বাড়িতে হাজির হওয়ার জন্য ছেলে-মেয়েদের মধ্যে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। নতুন মেহমানকে স্কটিশ কায়দায় পানীয় পরিবেশন করা হয় এবং উষ্ণ আতিথেয়তায় বরণ করা হয়।
অতিথিকে অবশ্য যেকোন একটি উপহার নিয়ে আসতে হয়। একসময় যদিও অতিথিকে হিসাবে কাঙ্খিত ছিলেন একজন লম্বা, গাঢ় এবং সুদর্শন কেউ, এখন অভ্যাগত যে কেউ সমান আতিথ্য পান।
অতিথি যে উপহার নিয়ে আসেন তাকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যদিও প্রতিটি উপহার আলাদা অর্থ বহন করে। উপহার দ্রব্যের তালিকায় থাকা খাদ্যদ্রব্য যেমন স্কটিশ বান কিংবা শর্টব্রেড (বিস্কুট) কিংবা পানীয় (হুইস্কি) বহুল ব্যবহৃত। এছাড়াও কয়লা কিংবা লবণও এককালে উপহার দ্রব্য হিসাবে পরিগণিত হত। উপরন্তু, স্থানভেদে উপহার দ্রব্যের মধ্যে বৈচিত্র্যও দেখা যায়।
এছাড়াও স্কটল্যান্ডের পার্বত্য অঞ্চলে একসময় কিছু বিশেষ রীতি পালন করা হত যা এখনও বিচ্ছিন্নভাবে চর্চা করা হয়। যেমন, নববর্ষের প্রথম প্রহরে অগভীর নদীর পানি পান করা, ঘরে ছিটিয়ে দেয়া এবং গৃহপালিত পশুর উপর ছিটিয়ে দেয়া। এটাকে এক ধরনের ম্যাজিক মনে করা হয়। এরপর জুনিপার বৃক্ষের ডাল পুড়িয়ে ঘরে ধোঁয়া দেয়া হয় যাতে ঘর পরিষ্কার হয় এবং মন্দ আত্মা চলে যায়। কিছুক্ষন পর ঘরের দরজা জানালা খুলে দেয়া হয় যাতে নববর্ষের তাজা বায়ু ঘরে প্রবেশ করতে পারে এবং হুইস্কি পান করে এই পর্ব উদযাপন করা হয়।
করোনা অতিমারিতে গত দুই বছর স্কটল্যান্ডে হগম্যানী উদযাপন করা হয়নি। এবছর তাই সফলভাবে বর্ষবরণ আয়োজনের জন্য কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সচেষ্ট ছিলেন।
হগম্যানী ফেষ্টিভ্যাল উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে বছরের শেষ দিন বিকেলে এডিনবরার চারটি পয়েন্টে সমকালীন সেরা শিল্পীদের অংশগ্রহণে ওপেন এয়ার কনসার্টের আয়োজন করা হয়। বৈরি আবহাওয়া সত্ত্বেও এসব কনসার্টে হাজার হাজার দর্শকের সমাগম ঘটে।
এডিনবরা কাসলের নীচে প্রিন্সেস ষ্ট্রিট গার্ডেন্সে আয়োজন করা হয় বর্ষবরণের প্রধান ইভেন্ট। এখানে রাত নয়টা থেকে নববর্ষের প্রথম প্রহর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় ওপেন এয়ার কনসার্ট। অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দেয়া হয় যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্বের জনপ্রিয় পপ ডুয়াল পেট শপ বয়েজকে।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন লন্ডনের জনপ্রিয় ডিজে এল জো এবং স্কটল্যান্ডের রম্য উপস্থাপিকা সুসি ম্যাককাবে। নববর্ষের প্রথম প্রহরে এডিনবরা কাসলে অত্যাধুনিক আতশবাজির মাধ্যমে উদযাপন করা হয় সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
এ সময় উল্লসিত দর্শকরা স্থানীয় রীতি অনুযায়ী নিজেদের মধ্যে গোলাকার হয়ে স্কটিশ কবি রবার্ট বার্ণসের অল্ড ল্যাং সিন নেচে গেয়ে বরণ করে নেন নতুন বছর। এই গানের কিয়দংশের অর্থ হল পুরনো বছর এবং পুরনো বন্ধুকে আমরা যেন ভুলে না যাই।
হগম্যানী নিয়ে ইউটিউবে দেখুন আমাদের ভিডিও
বদরুল হোসেন বাবু: যুক্তরাজ্যের এডিনবরায় বসবাসরত পরিব্রাজন লেখক । সম্পাদক: সাগরপার.কম