স্লিম বডি না থাকার কারণে সোনাক্ষী সিনহা বেশ কয়েকবার নায়িকা আসন থেকে সিটকে পড়েছিলেন। নিয়মিত ব্যায়াম করে তিনি আবার স্লিম হয়েছেন।
নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে তাঁর অভিনীত ‘ডাবল এক্সএল’ ছবিটি।
ছবিতে মূল দুই চরিত্রের একটি করেছেন সোনাক্ষী সিনহা। যেন তিনি ছবিতে এক উঠতি স্টাইলিষ্ট লেডি। তাছাড়া ছবিতে তাঁকে স্থূলকায় এক সুন্দরী মেয়ে হিসেবে দেখা যাবে। তিনি যে মুটিয়ে গিয়েছিলেন, তা ছবিটি দেখলে আর বোঝার সাধ্য নেই। ছবির পরিচালক হলেন সতরাম রমানি।
ছবির জগতে যখন তিনি আসেন তখন এই নায়িকা স্থূলকায় ছিলেন – যেন একদম স্লিম। যেন তাঁর দেহে বিন্দুমাত্র মেদ ছিল না।
সোনাক্ষী সিনহা প্রতিদিন কম করে হলেও তিন ঘন্টা সময় হাতে নিয়ে ব্যায়াম করে থাকেন। যে জন্য শরীর থেকে তাঁর বাড়তি ওজন তো কমে গেছে। পাশাপাশি এখন তিনি স্লিম আর ফিট। সুন্দরীও হয়েছেন যথেষ্ট, বয়স ধরা যায় না।
‘ডাবল এক্সএল’ ছবিতে সোনাক্ষী সিনহার সঙ্গে অভিনয় করেছেন দুই নায়ক জহির ইকবাল আর মহত রাঘবেন্দ্র।
ছবির জগতে এসে শরীর নিয়ে তেমন একটা সচেতন ছিলেন না – যে জন্য কয়েকটি ছবিতে কাজ করার পর মুটিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
অতিরিক্ত ওজনের জন্য সোনাক্ষী সিনহাকে একসময় নানা কটু কথা শুনতে হয়েছিল। ছবির প্রযোজক -পরিচালকরা যেন তাঁকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেছিল। ফিল্মের লোকজনের মুখে নানা কটু কথা শুনে যেন তাঁর আত্মবিশ্বাস চুরমার হতে বসেছিল। সবাই যেন তাঁর বডি নিয়ে খারাপ কথা বলত ; বিরূপ মন্তব্য করত – তা শুনতে শুনতে এক সময় সোনাক্ষী সিনহা উপলব্ধি করলেন, সিনেমা জগতে টিকে থাকতে হলে বডি ফিটনেসের বিকল্প কিছু নেই।
এই ভাবতে ভাবতে সোনাক্ষী সিনহা নিয়মিত ব্যায়াম করে দেহটাকে স্লিম করে তুললেন। এবার আর তিনি পিছিয়ে পড়বেন না। তাঁর আত্মবিশ্বাস, তিনি এগিয়ে যাবেনই।
ছোটবেলা থেকে সোনাক্ষী সিনহা বডি শেমিংয়ের শিকার হয়েছিলেন। কারণ, সে সময়ে তাঁর অতিরিক্ত ওজন ছিল। তা সত্বেও তিনি নিয়মিত খেলাধুলা করতেন। খেলাধুলায় তাঁর আত্মবিশ্বাস কোনো দিনই কম ছিল না।
যে কোনো মানুষের স্থূলতার পিছনে নানা কারণ থাকে। যা অনেক পরে হলেও সোনাক্ষী সিনহা বুঝতে পেরেছেন। সুতরাং তাঁর মুটিয়ে যাওয়ার আর সম্ভাবনা নেই।
সোনাক্ষী সিনহার জন্ম ১৯৮৭ সালের ২ জুন বিহারের পাটনায়। তাঁর বাবার নাম শত্রুঘ্ন সিনহা আর মাতার নাম পুনম সিনহা। এরা উভয়ে বলিউডের চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁর মা পুনম সিনহা ছবির জগত থেকে বিদায় নিলেও – তবে সোনাক্ষী সিনহার বাবা শত্রুঘ্ন সিনহা তো এখনও চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তাছাড়া তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার আসানসোলের সংসদ সদস্যও।
সোনাক্ষী সিনহার ভাইবোনরা হলেন লাভ সিনহা ও কুশ সিনহা।
সোনাক্ষী সিনহা ২০১০ সালে সালমান খানের বিপরীতে ‘দাবাং’ নামক হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউডের চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন। ‘দাবাং’ ছবিটি ২০১০ সালের বলিউডের সর্ব্বোচ্চ ব্যবসা সফল ছবির মর্যাদা লাভ করেছিল।
বলিউডে প্রবেশ করার আগে তিনি মডেলিং করতেন। তাঁর বিখ্যাত ডায়লগ ‘থাপ্পড় সে ডড় নেহি লাগতা সাব, পেয়ার সে লাগতা হ্যায়’ – সোনাক্ষী সিনহাকে গোটা ভারতবর্ষে পরিচিতি এনে দিয়েছিল। এই ডায়লগটি এখনও অনেকের মুখে মুখে শোনা যায়।
আরও পড়ুন: রানী মুখার্জী মানেই ছিল বাঙালির বুক ফুলিয়ে ঘোরা
সোনাক্ষী সিনহা প্রথম দিকে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন। কিন্তু হঠাৎ করে তাঁর জনপ্রিয়তায় ভাটা লেগে গিয়েছিল। তাঁর বিষয়টা এরকম ছিল যে ‘এই দেখিলাম সোনার ছবি আবার দেখি না’। অনেকবার তিনি ব্যর্থতার মুখে পড়েছেন। বলা যেতে পারে, সোনাক্ষী সিনহার কেরিয়ার যেন রোলার কোস্টার রাইডের মতো – এই সাফল্যের শীর্ষে, তো এই ব্যর্থতার গভীরে।
তবে সোনাক্ষী সিনহা এবার যথেষ্ট সচেতন – তাই তিনি এবার এগিয়ে যাবেন। পিছিয়ে আর পড়বেন না।
সিনেমা জগতের নায়ক -নায়িকাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে হামেশাই কৌতূহল সিনেমা প্রেমিকদের। সবার মনে যেন প্রশ্ন, সোনাক্ষী সিনহা কাকে ভালবাসে? কাকে মন দিয়েছেন?
তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ভক্তদের মনে নানান ধরনের প্রশ্ন তো থাকছেই – তাছাড়া তাঁকে নিয়ে, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও চলছে চর্চা। তাঁর বিয়ে নিয়ে কম জল্পনা শোনা যায়নি।
তাঁকে এখন পর্যন্ত বলা হয় ‘দাবাং গার্ল’। সম্প্রতি সোনাক্ষী সিনহা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি সবসময়ই যেটা বলতে চাই, তা হল আমার অভিনয় জীবন ও ছবির চরিত্র নিয়ে বলতে চাই। আর এতেই আমি সাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তবে অবশ্যই সিনেমা প্রেমিকরা বেশ কৌতুহলী, তাঁরা জানতে চান, আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। আবার এরাই কখনও কখনও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মিথ্যা রটনা রটাতেও দ্বিধাবোধ করে না।’
ইতিমধ্যে ৩৫ বছর বয়স পেরিয়ে যেতে চলেছে তাঁর। তিনি মনে করেন, ‘জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে সবই উপরওয়ালার নির্দেশে হয়। যখন সময় হবে তখন বিয়ে তো হবে – তবে উপরওয়ালার নির্দেশ মতো সেটা হবে।’
সোনাক্ষী সিনহা অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি হল –
২০১০ সালে দাবাং ; ২০১২ সালে রৌদি রাথোর, জোকার, ওমাঙ্ঘ ওহ মাই গড, সন অব সরদার, দাবাং টু ; ২০১৩ সালে হিম্মতওয়ালা, লুটেরা, ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বাই দোবারা, বস, বুলেট রাজা, রাজকুমার ;
২০১৪ সালে হলিডে -এ সোলজার ইজ নেভার অফ ডিউটি, অ্যাকশন জ্যাকশন, লিংগা ; ২০১৫ সালে তেভার, অল ইজ ওয়েল ; ২০১৬ সালে আকিরা, ফোর্স টু ; ২০১৭ সালে নূর, ইত্তেফাক ; ২০১৮ সালে ওয়েল কাম টু নিউইয়র্ক, হ্যাপি ফির ভাগ যায়েগি, আমলা পাগলা দিওয়ানা ফির ছে ; ২০১৯ সালে টোটাল ধামাল, কলঙ্ক, খান্দানী সাফাখানা, মিশন মঙ্গল, লাল কাপ্তান, দাবাং থ্রি ; ২০২০ সালে ধুমকেতু ; ২০২১ সালে ভূজ -দ্য প্রাইড অফ ইন্ডিয়া ; ২০২২ সালে কাকুদা, ডাবল এক্সএল – ইত্যাদি।