সেই বার জানুয়ারি মাসে গত কয়েকদিন ধরেই কাশ্মীরে প্রচুর তুষার পাত হচ্ছিল । রাস্তা ঘাট , ইলেক্ট্রিসিটি , যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন । মেহেদী হাসান তখন বর্ডার এলাকায় জুনিয়র পুলিশ অফিসার ছিল। পথঘাট শুনশান কেউ কোথাও নেই , রাস্তায় প্রায় এক হাঁটু সমান বরফ জমেছে আর চারিদিকে ঝিরি ঝিরি বরফ পড়ছে । সেদিনের দুর্যোগপূর্ণ রাত্রে মেহেদীর এর নাইট ডিউটি ছিল । ভ্রমণ:ইংল্যান্ডের লেক ডিস্ট্রিক্টের অপরূপ নিসর্গে এক ভারতীয় দম্পতি কাহিনীটি ইংল্যান্ডের লেক ডিষ্ট্রিক্টে ভ্রমণ নিয়ে।
রাত তখন প্রায় ১১ টার কাছাকাছি , মেহেদী দেখল অনেক দূরে একটা ছায়ার মত নড়ছে , আরো কিছুক্ষন পর লম্বা কিছু একটা সামনে এগিয়ে আসছে । মেহেদী দূরবীনে চোখ লাগিয়ে দেখল বরফে সব ঝাপসা কিছুই ভালো করে দেখে বোঝা যায় না । মেহেদী ভাবছিল গুলি ছুড়বে কিন্তু বন্দুক তাক লাগিয়ে সতর্ক হয়ে বসল । দেখল সামনে ধীরে ধীরে একটা একলা মানুষ মাথা থেকে পা পর্যন্ত শীতের পোশাকে ঢেকে এগিয়ে আসছে । মেহেদী আর একবার বন্দুকের টিগারে হাত দিয়ে গিয়ে থামিয়ে নিল ।
মেহেদী আর ওর দলবল তখন বন্দুক বাগিয়ে সব রেডি । প্রায় তখন মেহেদীর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বের কাছাকাছি চলে এসেছে তখন মেহেদী সবাইকে মানা করে নিজে একটা গুলি ছুড়ল আর দেহটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। মেহেদী আর তার দলবল মেহেদীকে কভার করে সামনে এগিয়ে গিয়ে দেহটিকে তুলে আনল । ঠাণ্ডায় , অনাহারে ক্লান্তিতে আর গুলি লাগার ফলে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে ।
ওরা দেখল একজন মহিলা । তখন ডিউটিতে কোনো মহিলা পুলিশ ছিল না অগত্যা জুনিয়র হওয়ার দরুন মেহেদীকেই অসুস্থ আহত মহিলার সেবা শুশ্রূষা করার ভার পড়ল। মহিলাকে চেয়ারের মধ্যে শুইয়ে দিল, মেহেদী দেখল পায়ে গুলি লেগেছে ব্যান্ডেজ ওষুধ পত্র লাগিয়ে দিল , উপরের মোটা জ্যাকেটটা খুলিয়ে পাশে রাখল । দেখল মোটা জ্যাকেটের তলায় ওষুধের প্রেসক্রিপশন আর ওষুধ । একটানা অস্পষ্ট বিড়বিড় করে যাচ্ছে জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে ।
সকালের দিকে একটু সুস্থ হলে পুলিশি তদন্ত শুরু হল ওখান থেকেই জানা গেল ওর নাম ফারিহা , শহরে গেছিল অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ আনতে তারপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হওয়ায় ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আটকে পড়ে , আবহাওয়ার ক্রমশ অবনতি দেখে তাকে উপায় অবলম্বন করতে হয় । তখন থেকেই মেহেদীর সাথে ফারিহার আলাপ । মেহেদী বাংলাভাষী আর ফারিহা ইংরেজি । ফারিহা বিদেশী ; ব্যবসা সুত্রে কাশ্মীরে বসবাস শুরু করেছে । দীর্ঘদিন আলাপ পরিচয়ের পর ওরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় । চড়াই উতরাই পেরিয়ে দশ বছরের দাম্পত্য জীবনে আট বছরের একটি ছেলে আছে , রণিত । মেহেদির স্ত্রী পুত্র নিয়ে ছোটো একটি পরিবার । মেহেদির কর্মসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং হয় তাই রণিত ওদের সাথে থাকে না । রণিত ফারিহার মায়ের কাছে থাকে ওখান থেকেই পড়াশুনা করে । এখন মেহেদী – ফারিহা দিল্লিতে থাকে ।
মেহেদীর বন্ধুর নিমন্ত্রণে ওদের দশদিনের UK ট্রিপ । মেহেদী ফারিহা রণিত আর মেহেদীর বন্ধু অ্যান্ডি এবং ওনার স্ত্রী ম্যারি পাঁচজনে মিলে লেকল্যান্ড ট্রিপে যাবে । ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাইট । লন্ডন থেকে অ্যান্ডি এবং ম্যারি ওদের সাথে যোগদান করবে । তারপর ওরা একদিন অ্যান্ডির বাড়িতে থেকে ট্রেনে করে কেন্ডাল যাবে , ওখানে আগে থেকে হোটেল বুক করা আছে ওখান থেকেই ওয়ার্ডসওয়ার্থ , কোলরিজ , চার্লস প্রমুখ লেক কবিদের এর কাব্য প্রেরণার বিচরণ ভূমি ৯০০ বর্গমাইল জুড়ে হ্রদ , ঝর্না , পর্বত শৃঙ্গ , পাহাড়ি উপত্যকা জুড়ে বিস্তৃত ইংল্যান্ডের লেক ডিসট্রিক ঘুরতে যাবে । ওখানের গ্রাসমিয়ার , উইন্ডারমেয়ার , কেন্ডাল সহ সুন্দর সুন্দর টাউন গুলো দেখবে । ঠিক হল প্রথম দিনে টার্ন হ্উস (Tarn Hows) যাবে ।
কেন্ডাল থেকে বাসে করে কনিস্টন, ওখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে টার্ন হ্উস। লেক ডিসট্রিকের ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার সেখানে প্রফেশনাল গাইডার থাকে এছাড়াও প্যামপ্লেট আকারে ম্যাপ পাওয়া যায় যার মধ্যে বাস , ট্রেন ট্রান্সপোর্ট পরিষেবার বিস্তৃত বর্ণনা দেওয়া থাকে । কাস্টমার সার্ভিস এবং বাস পরিষেবা ভালো । হোটেল থেকেই গাইডার পাওয়া যায় এবং একবার মাত্র সল্প মূল্যে টিকিট কেটে নিয়ে পুরো লেক ডিসট্রিক ঘুরে দেখা যাবে ।
গ্লেন মেরি ব্রীজে গাড়ি পার্ক করে , সামনেই সাদা রঙের সাইন বোর্ড এর মধ্যে ম্যাপ গাইডলাইন সব দেওয়া আছে । আর টয়লেট ব্লক আছে ওখানেই ফ্রেস ট্রেস হয়ে , ম্যাপ সেটা ভালো করে বুঝে নিয়ে টার্ন হ্উস আর টম গিল জলপ্রপাত এর উদ্দেশ্যে । পায়ে হাঁটার সরু পথ আর দুপাশে সবুজে মোড়া গাছগাছালি দিয়ে পাঁচজনে সামনের দিকে এগিয়ে গেল ।
মার্শাল আর প্রকৃতির সমন্বয়ে সৃষ্ট টার্ন হ্উসের এই বনভূমিকে সাদা ক্যানভাসে রং তুলি দিয়ে প্রকৃতির চিত্রশিল্পী মনের মাধুরী মিশিয়ে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে বার বার রঙ বদলে নতুন সজ্জায় সজ্জিত করে ।
সাদাটে ধূসর রঙের পায়ে হাঁটার পথ আর দুপাশে ঘন সবুজে জমি ঢাকা আঁকা বাঁকা s কার্ভের সরু রাস্তা । দুপাশ জুড়ে স্প্রুস , পাইন, লার্চ গাছের লম্বা লম্বা সরু গুড়ি উপর দিকে উঠে গেছে । টম ভ্যালি পাহাড়ি উপত্যকা দিয়ে ঢালু সবুজ ঘাস জমি সমতল ভূমি স্পর্শ করেছে আর মাঝখানে রাস্তা । সবুজায়ন ঘেরা রাস্তা । কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দেখলাম ঘাস জমির উপর পাহাড়ী ভেড়া চড়ে বেড়াচ্ছে কয়েকজন গাছের ছায়ার বিশ্রাম নিচ্ছে । যতই এগিয়ে যাচ্ছি মনে হচ্ছে আঁকা বাঁকা সরু পথ ঘন সবুজ গাছের সাথে মিশে মিলিয়ে গিয়ে এই বুঝি রাস্তা শেষ ।
যদিও মার্শাল – প্রকৃতির সমন্বয়ে সৃষ্ট বিউটি স্পট টার্ন হ্উসের সৌন্দর্য ঋতু অনুযায়ী বদলায় । শীতের ঝরা পাতায় ঘেরা টার্ন হ্উসের সৌন্দর্য যেমন অসাধারন তেমনি অন্যান্য ঋতুগুলিতেও । ওরা গেছিল গ্রীষ্মে , জুলাই মাসে । গ্রীষ্মে টার্ন হ্উসের সৌন্দর্যও অসাধারণ । ৩৭ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত গোলাকার সবুজ গাছগাছালিতে ঘেরা মাঝখানে টার্ন হ্উস। যা দৈর্ঘ্যে 0.971 কিমি (0.603 মাইল) এবং প্রস্থে 0.258 কিমি (0.160 মাইল)। ৬১১ একরফুট জলসহ ২৯ ফুট গভীর ।
আরও পড়ুন: লন্ডন আই : আর্কিটেক্ট দম্পতির স্বপ্নের ফসল
কাঁচের মত স্বচ্ছ হৃদের জলের মধ্যে ঘন নীলের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাদা মেঘের দল সমৃদ্ধ বিশাল আকাশের একটুকরো প্রতিবিম্বিত হ্রদের নীল জলে মধ্যে মধ্যে টুকরো টুকরো জমির মধ্যে আর জলাশয়ের চারপাশ ঘিরে লম্বা লম্বা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে স্প্রুস , পাইন , লার্চ গাছ আর হৃদের জলে তাদের ছায়া পড়ে গাছের আকার দ্বিগুণ বেড়ে যায় । দূরে পাহাড়ের চূড়া দেখা যায় । জলের মধ্যে একদল করে করে হাঁস ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এই সুন্দর সাজানো গোছানো টার্ন হ্উস কয়েক শতাব্দী আগে হাক্সেড এর সাধারণ জলাভূমির একটা অংশ ছিল আর সাথে ছোট ছোট চারটে টার্ন ছিল । এই জলাভূমি কিছু স্থানীয় চাষী এবং Monk Coniston Hall এর মার্শাল পরিবারের মালিকাধীনে ছিল । শিল্পপতি জন মার্শালের তৃতীয় পুত্র জেমস গ্যার্থ মার্শাল পার্লামেন্ট এর লিডস এর সদস্য এবং ছিলেন, ১৮৬২ এ এনক্লোজার অ্যাক্টের পর সমস্ত জমিটি নিজের আয়ত্তাধীন করে নেয় । এরপর সন্তানসম ভাবে লালন পালন করে ।
টার্ন এর জলস্তর বাড়ানোর জন্য ড্যাম নির্মাণ করেন । স্প্রুস পাইন লার্চ লাগিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল (ফরেস্ট) ল্যান্ডস্কেপ গড়ে তোলেন । মিল স্থাপন করেন , যার জন্য প্রয়োজন ছিল কাঠ এবং বিদ্যুতের । কাঁচা মালের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কাঠ এবং বিদ্যুৎ চাহিদা এখান থেকে সরবরাহ করা হত । মিলটি স্থাপন করেছিলেন Yewdale তে , টম গিল জলপ্রপাত এর নিচে । ২০ শতকের শুরুর দিকে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় বিউটি স্পট হিসেবে চিহ্নিত করা করেছিলেন । ফি বছর Ambleside এবং Windermere থেকে চারবন্স ট্রিপ এর আয়োজন করা হত , শীতে স্কেটিং এবং গ্রীষ্মে পিকনিক এর জন্য পর্যটক আসত ।
১৯৩০ এ মার্শাল Monk coniston estate এর ৪০০০ একর জমি বিক্রি করতে চান । তারপর কয়েক হাত ঘুরে শেষ পর্যন্ত পাকাপাকি ভাবে The National Trust এর অধীনস্থ হয় । সামান্য কিছু পরিবর্তন করা হয় , কার পার্কিং স্থান , রাস্তা মেরামত ইত্যাদি সকল উন্নত করে এবং টার্ন হ্উস দর্শনের জন্য মূল্য নির্ধারণ করে । হ্রদের পাশেই ম্যাট পেতে মেহেদী ; ফারিহা কে টার্ন হ্উস কিভাবে তৈরি হয়েছে তার কাহিনী শোনাচ্ছিল । ফারিহা মেহেদীর কাছে বাংলা ভাষা শিখেছে , এখন ফারিহা বাংলাভাষা বুঝতে পারে আর ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলা বলতে পারে ।
ফারিহা : হাউ ডু ইউ নো সো মাচ ইনফরমেশন ? হ্যাভ ইউ এভার বিন হেয়ার ?
মেহেদী ( হালকা হাসির রেখা মুখে লাগিয়ে জোরে নিশ্বাস নিয়ে) : ইয়েস্ কেম উইথ সামওয়ান । ( কিছুক্ষন চুপ থেকে ) : উইথ আ লেডি , (আবার কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে) : আ বিউটিফুল লেডি ।
ফারিহা ( ভ্রু দুটো কাছে করে) : লেডি !? হু ? মেহেদী (একটু উদাস হয়ে ) : ছিল .. একজন । ফারিহা : আ..মাকে ব..অ .লবে না ।
মেহেদী (হেসে ) : না , বঅল..বো না ।
ফারিহা সামান্য মুখ বেকিয়ে মেহেদীর থেকে উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে দিল। স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে মিষ্টি একটা খুনসুটি চলছিল । দশ বছরের দাম্পত্যে ছোটো একটু প্রেমের খুনসুটি আদিখ্যেতা মনে হলেও ওদের দাম্পত্য জীবনের এই প্রেম একই ভাবে অক্ষুণ্ণ আছে । ওরা এসে যাওয়ায় দাম্পত্য প্রেমে ছেদ পড়ল। তারপর ওরা ওখান থেকে উঠে পড়ল সামনের দিকে হাঁটা দিল। আগে আগে অ্যান্ডি – রণিত- ম্যারি আর পিছনে মেহেদী ফারিহা ।
মেহেদী ফারিহার এবার হাতটা ধরতে গেলে
ফারিহা ছড়িয়ে নিয়ে : গো উইথ ইওর বিউটিফুল লেডি ।
মেহেদী : অফ্ কোর্স উইল গো নেক্সট টাইম ।
অ্যান্ডি আর ম্যারি নিঃসন্তান দম্পতি , ছোটো দুষ্টু রণিতকে ওরা সন্তানসম স্নেহ করে । রণিতের ও অ্যান্ডি আঙ্কেল আর ম্যারি আন্টিকে খুব ভালো লাগে । লন্ডনে ওরা যখন থেকে যোগদান করেছে তখন থেকেই রণিত ওদের সাথেই সবসময় । রনির অ্যান্ডি ম্যারির হাত ধরেই রাস্তা ক্রস করা ,অ্যান্ডি ম্যারির মাঝখানে সিটে বসা সব একসাথে ।
রণিত রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একজায়গায় দেখল গাছের গুঁড়ি পড়ে আছে আর তার মধ্যে অগুনতি কয়েন পোঁতা আছে । কয়েনের অর্ধেক টা ওপরে বাকিটা নীচে এইভাবে পর পর সারি সারি অজস্র কয়েন একনজরে দেখলে মনে হবে গাছের গুঁড়ির টেক্সচার।
মেহেদী : ওই গুঁড়ির মধ্যে কয়েন পুঁতে রেখে , উইশ করে । ওই কয়েন গুলো গাছ থেকে কেউ তুলে নেবে না ওটা ওখানেই থেকে যাবে । রণিত এক্সসাইটেড হয়ে বাবার কাছে একটা কয়েন নিয়ে গাছের গুঁড়ির সামনে গেল । তারপর গুড়ির মধ্যে ভালো একটা স্থান বেছে নিয়ে
রণিত : চোখ বন্ধ করে মনে মনে কিছু একটা বিড়বিড় করে কয়েন তাকে গাছের মধ্যে পুঁতে দিল । কয়েন পোঁতা হয়ে গেলে
মেহেদী : হোয়াট ডু ইউ প্রে ফর রণিত ?
ফারিহা : দ্যাট ইজ নট টু সে , বিকজ প্রেয়ার ইজ নট ফুলফিলড । গ্রান্ডমা টোল্ড মি।
মেহেদী আর কিছু বললো না । তারপর তারা সামনে এগিয়ে গেল। এবার ওরা টম গিল ওয়াটার ফল দেখতে গেল।
টম গিল গিরিখাত থেকে পাহাড়ী গা বেয়ে গ্ল্যান মেরি ঝর্ণার জল সমতল ভূমিতে খরস্রোত বয়ে চলেছে অনবরত । টম গিল গিরিখাত দিয়ে দুধ সাদা ঝর্নার জল আর দুপাশে সবুজ শ্যাওলায় মোড়া শিলাখন্ড আর দুপাশের গাছের ডাল । শান্ত নির্জন পরিবেশ মাঝে মধ্যে পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে আর ঝর্ণার জলের শব্দ । মুগ্ধ করা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য । মেহেদী আর ফারিহা দুজনেই বাকরুদ্ধ হয়ে ঝর্ণার শোভা উপভোগ করছিল। রণিত ঝর্ণার জলের মধ্যে হাত দিয়ে , জল নিয়ে বাবা মায়ের দিকে জল ছোড়া , নুড়ি পাথর তুলে জমা করা এইসব নিজের মত দুষ্টুমি করছিল।
মেহেদী : ফারিহা কে বলল জানো , এই ঝর্নার আগে নাম ছিল টম গিল ওয়াটারফল পরে মার্শাল এর নাম বদলে তার স্ত্রীর নামে এই ঝর্ণার নাম Glan Mary Waterfall নামে অভিহিত করেছিলেন ।
ফারিহা (মুখে একটু হাসির রেখা বসিয়ে) : সো সুইট ।
সরু রুপোলি স্বচ্ছ ঝর্নার জলের ধারা ছোটো ছোট পাথরের গায়ে ধাক্কা খেয়ে কুল কুল শব্দ করে বয়ে চলেছে । একপাশে সবুজ শ্যাওলায় মোড়া পাথর , ছোটো বড় গাছ আগাছায় মোড়া জঙ্গল । অপর পাশে হাঁটা পথের ভাঙ্গাচোরা পাথুরে রাস্তা আর পাশে ঘন সবুজের জঙ্গল ।
আর দুপাশ ক্রমশ খাড়াই হয়ে জমি উঠে গেছে । তাতে এবড়ো খেবড়ো পাথর আর গাছের শিকড় টম গিলের জলের ধারা পান করতে পর্যন্ত নেমে গেছে । তারই মধ্যে পায়ে হাঁটার পথ দুপাশ থেকে গাছের ডাল , পাতা উপরে সবুজের ছাদ বানিয়ে রেখেছে । মাটি , গাছের শিকড় আর শ্যাওলায় মোড়া পাথর আর ছোট ছোট আগাছায় পূর্ণ পথ ।
মার্শাল – প্রকৃতির সমন্বয়ে সৃষ্ট বিউটি স্পট টার্ন হ্উস , টম গিল ওয়াটারফল এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ডুব দিয়ে ইংল্যান্ডের বনভূমির অঞ্চল থেকে বেরিয়ে ওদের গাড়িতে উঠল।
মেহেদী অ্যান্ডি কে জিজ্ঞেস করল : হাউ ওয়াজ Tarn Hows ?
অ্যান্ডি : ওহ! ভেরি বিউটিফুল ! নাথিং টু সে , ইট ইজ ওয়ান অফ দ্যা মোস্ট রোমান্টিক প্লেস আই হেভ এভার সিন ! ফ্যান্টাবিউলাস !
মেহেদী – ফারিহা- ম্যারি প্রত্যেকেই অ্যান্ডি র সাথে একই সহমত পোষণ করল। এবার ওদের গাড়ি ওদের কনিস্টন স্টেশনে নামিয়ে দিল । ওখানে ফ্রেস হয়ে খাবার দাবার সেরে ট্রেনে উঠল। রণিত অ্যান্ডি – ম্যারির সাথে আলাদা বসেছিল আর ফারিহা -মেহেদী আলাদা সিটে বসেছিল । কিছুক্ষন পরে ট্রেন ছেড়ে দিল । ফারিহা উইন্ডো গ্লাস দিয়ে বাইরে দেখছিল । পাহাড়ে ঘেরা লেকল্যান্ড এর সৌন্দর্য মনোরম । দিগন্ত জুড়ে ঘন সবুজে মোড়া আর ধোঁয়াটে নীল পাহাড় । সবুজের বিশাল ঘাস জমি আর মধ্যে মধ্যে পাইন সহ বড় বড় গাছ, মাঝে মধ্যে দূরে লেক দেখা যাচ্ছিল ।
মেহেদী ফারিহাকে দেখছিল ফারিহা বাদামি রঙের ফ্লোরাল লং স্কার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার স্লিভসের এর সাদা টপ সাথে নীল ফেডেড জিন্সের স্লিভলেস জ্যাকেট পড়েছিল । ফারিহার উজ্জ্বল চেহারায় কাঁধ অবধি কালো ঘন চুল মুখশ্রীতে একটা কীসের যেন কঠোরতার ভাব । ডিম্বাকৃতির মুখমণ্ডলের চওড়া কপাল , ছোট টিকলো নাক , পাতলা ঠোঁট , ঘন ভ্রুর নীচে ছোটো ছোট দুজোড়া চোখ ।
অনেকক্ষণ পর মেহেদী : ফারিহা……….
ফারিহা : হোয়াট ?
মেহেদী : ইউ উড নট টক টু মি ?
ফারিহা : নো ।
মেহেদী ফারিহার হাতটা মেহেদীর কোলে রেখে : ইউ ওয়ান্টেড টু নো , হাউ ডিড আই নো সো মাচ ইনফরমেশন ?
ফারিহা : নট ইন্টারেস্টেড ।
মেহেদী আবার বলল : আই গট ইট ফ্রম ইন্টারনেট ।
ফারিহা (একগাল হেসে) : শয়…. টান …।
মেহেদী (হেসে) : হোয়াট এস ফারিহা ?
ফারিহা (কয়েক সেকেন্ড ভেবে) : ” ষ ”
মেহেদী (একটা দুষ্টুমি ভরা হালকা একটা হাসির রেখা মুখে লাগিয়ে) : থ্যাঙ্কউ মাই ডিয়ার । ফারিহা (ঠিক বুঝলো না শুধু) : ওয়েলকাম !
তারপর স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সাধারণ কথাবার্তা চলতে থাকল।
সাগরপারের জন্য লেখাটি পাঠিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে সুহা খান।