রিয়াদের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে শিরোপা খুলনার


 

অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে শিরোপা লাভ করল খুলনা। গাজিগ্রুপ শেষ পর্যন্ত রানার্সআপেই সন্তুষ্ট থাকল।

অবশেষে বঙ্গবন্ধু টি-টুয়েন্টি কাপের শিরোপা নিজেদের ঘরে তুলল জেমকন খুলনা। ফাইনাল ম্যাচে টুর্ণামেন্টের সবচেয়ে ধারাবাহিক দল ফেভারিট গাজি গ্রুপ চট্রগ্রামকে তুমুল প্রতিদ্বন্দিতামুলক ম্যাচে ৫ রানে হারিয়ে চমক দেখাল। খুলনার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ পুরো প্রতিযোগিতায় নিষ্প্রভ থাকলেও ফাইনালে নৈপূণ্যে ঝলসে ওঠেন। তার উইলো থেকে আসা ঝকঝকে ৭0 রানের অপরাজিত ইনিংসের কল্যানেই খুলনার চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন সহজ হয়।

আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে বাংলাদেশের অন্যতম ধারাবাহিক এবং হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান রিয়াদ পুরো টুর্ণামেন্টের খেলা শেষ ম্যাচেই খেললেন। প্রথমে ব্যাট করে খুলনার করা ১৫৫ রানের ইনিংসে রিয়াদ একাই করেছেন ৭০! ৪৮ বলে সাজানো এই ইনিংসটিই যেকোন পর্যায়ের ক্রিকেটে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সর্বোচ্চ ইনিংস। ৮ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো চমকপ্রদ ইনিংসটিই শেষ পর্যন্ত খুলনার অপ্রত্যাশিত চমকের সেরা নিয়ামকে পরিণত হয়।

দুই দলের আগের মোকাবেলায়  ৮০ রান করা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জহিরুল ইসলাম গাজি গ্রুপ চট্রগ্রামের নাহিদুলের প্রথম বলেই আউট হয়ে যান। এরপর নাহিদুল ৮ রানে ফেরত পাঠান আউট অফ ফর্ম ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েসকে। শুরুতেই এই দুইজনকে হারিয়ে বেশ চাপের মুখে পড়ে যায় জেমকন খুলনা। এরপর ব্যাটিং অর্ডারে কিছুটা পরিবর্তন এনে চার নাম্বারে পাঠানো হয় সাম্প্রতিক কালের সাড়া জাগানো হার্ঢহিটিং ব্যাটসম্যান আরিফুলকে। উদ্দেশ্য ছিল ওপেনার জাকির হাসানের (২৫) সাথে পার্টনারশীপে দলীয় রান বাড়িয়ে নেয়া। জাকির হাসান আউট হলে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ পাঁচ নাম্বারে ব্যাটিংয়ে নামেন।

একপ্রান্ত আগলে ধরে টিটুয়েন্টির আক্রমনাতমক ষ্ট্রাইক রেট অব্যাহত রেখে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করে যান রিয়াদ। অন্যপ্রান্তে একে একে উইকেটে এসে বিদায় নেন শুভাগত হোম (১৫), শামিম হোসেন (০), মাশরাফি (৫)। এর আগে আরিফুল আউট হয়ে যান ২১ রান করে। শেষ ওভারে চট্রগ্রামের হয়ে বোলিং করেন অনিয়মিত মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকার। তার নির্বিষ বোলিংয়ে ১৭ রান তুলে নেন রিয়াদ। শেষ পর্যন্ত চট্রগ্রামের সামনে চ্যালেন্জিং ১৫৫ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দেয় খুলনা। চট্টগ্রামের নাহিদুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম ২টি, মোসাদ্দেক হোসেন ও মুস্তাফিজুর রহমান ১টি করে উইকেট নেন।

জয়ের জন্য ১৫৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুভসূচনা করেন চট্রগ্রামের দুই ওপেনার। পুরো টুর্ণামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক লিটন দাস ও সৌম্য সরকার বিচ্ছিন্ন হন দলীয় ২৬ রানে। সৌম্য সরকার আগের বলে লাইফ পেয়েও পরের বলে ইমরুল কায়েসকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ব্যক্তিগত ১২ রানে। এরপর চট্রগ্রামের অধিনায়ক মিথুন দলের বিপদ বাড়িয়ে ৭ রান করে বিদায় নেন। চট্রগ্রামের জন্য বড় বিপর্যয় আসে লিটন দাশ দলীয় ৫১ রানে ফিরে গেলে। ২৩ বলে ২৩ রান করা লিটন দাশ রান আউটের ফাঁদে পড়েন।

দলীয় বিপর্যয়ের মধ্যেও মাথা ঠান্ডা রেখে শেষ পর্যন্ত লড়ে যান সৈকত আলী। টিটুয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নেয়ার জন্য ফাইনাল ম্যাচকেই বেছে নেন তিনি। তবে তার ৪৫ বলে করা ৫৩ রান পরিস্থিতির তুলনায় ছিল অপ্রতুল। তার সাথে অন্য প্রান্তে ব্যাটিংয়ে থাকা আরেক সৈকত (মোসাদ্দেক) চট্রগ্রামের আশা শেষ পর্যন্ত জিইয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু জেমকন খুলনার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আস্কিং রান রেটের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাওয়াটা সম্ভব হচ্ছিল না।

শেষ ওভারে মাহমুদুল্লাহর উদ্ভাসিত নৈপুণ্যে জেমকন খুলনা নিয়েছিল ১৭ রান। চট্রগ্রামের জয়ের জন্য শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। উইকেটে ছিলেন ভরসা করার মতই সৈকত আলী এবং মোসাদ্দেক সৈকত। যারা প্রাণপণ লড়ে খেলার উত্তেজনা ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু সদ্য বাবা হারানো শহিদুল ইসলাম পূর্ণোদ্যমে লড়ে দুইজনকেই আউট করেন শেষ ওভারে। চট্রগ্রামের শিরোপা স্বপ্নও ধূলিসাৎ হয়ে যায় ৫ রানে পিছিয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: প্রথম বলেই উইকেট সাকিবের, আইপিএলে কলকাতার শুভসূচনা

ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের জন্য দ্বিতীয় কেউ বিবেচনাতেও আসেননি। মাহমুদুল্লাহর এমন ইনিংসের মাহাত্ম্যের কাছে অন্যদের পারফর্মেন্স বেশ অনুজ্জ্বল। তবে চমকপ্রদ বোলিংয়ের ঝলক দেখিয়ে প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জিতেছেন গাজি গ্রুপ চট্রগ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান।

(একটি সাগরপার প্রতিবেদন। আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক শেয়ার দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।)