মালদ্বীপ তার স্বচ্ছ নীল জল, সাদা বালুর সমুদ্র সৈকত এবং বিলাসবহুল রিসোর্টের জন্য বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের স্বপ্নের গন্তব্য। বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য মালদ্বীপ ভ্রমণ বিশেষভাবে সহজ কারণ এটি একটি ভিসা-মুক্ত দেশ এবং ঢাকা থেকে তুলনামূলকভাবে কাছাকাছি। এই গাইডে আমরা বাংলাদেশীদের জন্য মালদ্বীপ টুরিস্ট ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, প্রবেশের শর্ত, আবেদন প্রক্রিয়া এবং ভ্রমণের সূত্র নিয়ে আলোচনা করব।
বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য মালদ্বীপ ভিসা নীতি
মালদ্বীপ সকল জাতীয়তার পর্যটকদের জন্য আগমনের সময় ৩০ দিনের বিনামূল্যে টুরিস্ট ভিসা প্রদান করে। বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্যও এই সুবিধা প্রযোজ্য এবং কোনো পূর্ব-আবেদনের প্রয়োজন হয় না। এই ভিসা ভিসা অন আরাইভাল হিসেবে প্রদান করা হয় এবং এটি মালদ্বীপ ইমিগ্রেশন আইনের ধারা ৭ ও ৮ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত।
মালদ্বীপ টুরিস্ট ভিসার প্রয়োজনীয় শর্তাবলী
মালদ্বীপে প্রবেশের জন্য নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ করতে হবে:
- পাসপোর্ট: মেশিন রিডেবল জোন সহ বৈধ পাসপোর্ট, যার মেয়াদ প্রবেশের তারিখ থেকে কমপক্ষে ১ মাস অবশিষ্ট থাকতে হবে। মেয়াদ বাড়ানো পাসপোর্ট গ্রহণ করা হয় না।
- ভ্রমণের পরিকল্পনা: নিশ্চিত রিটার্ন টিকিট এবং মালদ্বীপে থাকার জন্য হোটেল, রিসোর্ট বা গেস্টহাউসের প্রি-পেইড বুকিং। অথবা প্রতিদিন ১০০-১৫০ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ।
- ট্রাভেলার ডিক্লারেশন: ফ্লাইটের ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে IMUGA পোর্টালে ইলেকট্রনিক ট্রাভেলার ডিক্লারেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
- ইয়েলো ফিভার টিকা: ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে আগমনের ক্ষেত্রে টিকার সার্টিফিকেট প্রয়োজন।
- অন্যান্য: পরবর্তী গন্তব্যের জন্য প্রয়োজনীয় ভিসা এবং পাসপোর্টের বৈধতা।
গুরুত্বপূর্ণ: সম্পূর্ণ ডকুমেন্ট থাকলেও প্রবেশের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ইমিগ্রেশন অফিসারের বিবেচনার উপর নির্ভর করে।
মালদ্বীপ টুরিস্ট ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া
মালদ্বীপ টুরিস্ট ভিসার জন্য কোনো পূর্ব-আবেদনের প্রয়োজন নেই। প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ:
- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট (পাসপোর্ট, রিটার্ন টিকিট, হোটেল বুকিং) প্রস্তুত করুন।
- ফ্লাইটের ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে IMUGA পোর্টালে ট্রাভেলার ডিক্লারেশন ফর্ম পূরণ করুন।
- মালে ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে ডকুমেন্ট জমা দিন।
- শর্ত পূরণ হলে ৩০ দিনের বিনামূল্যে টুরিস্ট ভিসা প্রদান করা হবে।
মালদ্বীপ টুরিস্ট ভিসা এক্সটেনশন
৩০ দিনের টুরিস্ট ভিসা অতিরিক্ত ৬০ দিনের জন্য এক্সটেন্ড করা যায়, যাতে মোট থাকার সময়সীমা ৯০ দিন হয়। এক্সটেনশনের জন্য মালে ইমিগ্রেশন হেড অফিসে আবেদন করতে হবে। প্রয়োজনীয়তা: আবেদন ফর্ম (IM23), এক্সটেনশন ফি (প্রায় ৭৫০ মালদ্বীপীয় রুফিয়া), পাসপোর্ট, আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ এবং থাকার ব্যবস্থার নিশ্চয়তা। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আবেদন করতে হবে, অন্যথায় জরিমানা বা ডিপোর্টেশনের ঝুঁকি রয়েছে।
মালদ্বীপ ভ্রমণের খরচের হিসাব
| খরচের ধরন | আনুমানিক খরচ |
|---|---|
| ভিসা ফি | বিনামূল্যে (এক্সটেনশন: ৫,৮০০ টাকা) |
| রাউন্ড ট্রিপ ফ্লাইট | ৩৫,০০০–৫০,০০০ টাকা |
| থাকার খরচ | গেস্টহাউস: ৩,০০০–৫,০০০ টাকা/দিন; রিসোর্ট: ১০,০০০–৫০,০০০ টাকা/দিন |
| দৈনিক খরচ | ৫,০০০–১০,০০০ টাকা |
| মোট খরচ (৭ দিন) | ৬০,০০০–১,০০,০০০ টাকা (গেস্টহাউস ভিত্তিক) |
মালদ্বীপ ভ্রমণের গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- পাসপোর্টে কমপক্ষে ১ মাসের বৈধতা এবং ২টি ফাঁকা পৃষ্ঠা থাকতে হবে।
- মেডিকেল ইনস্যুরেন্স সহ ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স নিন।
- নিষিদ্ধ জিনিসপত্র যেমন অ্যালকোহল, শুয়োরের মাংস এবং নির্দিষ্ট ধর্মীয় উপকরণ আনা থেকে বিরত থাকুন।
- মালে এবং স্থানীয় দ্বীপে ইসলামিক পোশাকের নিয়ম মেনে চলুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্ন: বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য মালদ্বীপে ভিসা লাগে কি?
উত্তর: না, বাংলাদেশী নাগরিকরা আগমনের সময় ৩০ দিনের বিনামূল্যে টুরিস্ট ভিসা পান।
প্রশ্ন: মালদ্বীপ টুরিস্ট ভিসা কত দিনের জন্য বৈধ?
উত্তর: ৩০ দিনের জন্য বৈধ, যা অতিরিক্ত ৬০ দিনের জন্য এক্সটেন্ড করা যায়।
প্রশ্ন: টুরিস্ট ভিসায় মালদ্বীপে কাজ করা যায় কি?
উত্তর: না, টুরিস্ট ভিসায় কোনো ধরনের কাজ নিষিদ্ধ।
শেষ কথা
মালদ্বীপ বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য একটি সহজলভ্য এবং আকর্ষণীয় ভ্রমণ গন্তব্য, কারণ এখানে ভিসা অন আরাইভালের সুবিধা রয়েছে। সঠিক ডকুমেন্ট প্রস্তুতি এবং প্রবেশের শর্ত পূরণ করলে ভিসা প্রাপ্তি সহজ। পাসপোর্টের বৈধতা, সম্পূর্ণ ভ্রমণ পরিকল্পনা এবং স্থানীয় নিয়ম মেনে চললে আপনি এই স্বপ্নের দ্বীপপুঞ্জের অপূর্ব সৌন্দর্য অবাধে উপভোগ করতে পারবেন।
যদি মালদ্বীপ ভ্রমণ সম্পর্কে আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্টে জানান। এই গাইডটি অন্যদের সাথে শেয়ার করে তাদের ভ্রমণের পরিকল্পনায় সহায়তা করুন।