একদা মঙ্গোলীয়রা ইউক্রেন তছনছ করেছিল। আর এখন তছনছ করছে রাশিয়া। লিখেছেন দুই বাংলার অন্যতম সেরা ভ্রমণ লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন।
Table of Contents
ইউক্রেনের আরেক নাম উক্রাইনা। এটি পূর্ব ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। আয়তনের হিসাবে রাশিয়ার পরে এটি ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র।
ইউক্রেনের আয়তন ৬,০৩,৬২৮ বর্গকিলোমিটার।
দেশটিতে প্রায় ৪ কোটি ৩৬ লক্ষ লোকের বাস।
ইউক্রেন ইউরোপ মহাদেশের ৮ম সর্বোচ্চ জনবহুল দেশ।
ইউক্রেনের পশ্চিমে পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি, দক্ষিণ -পশ্চিমে রোমানিয়া ও মালদোভা। দক্ষিণে কৃষ্ণ সাগর ও আজব সাগর, পূর্বে ও উত্তর -পূর্বে রাশিয়া ও বেলারুশ। দক্ষিণে ক্রিমিয়া উপদ্বীপে অবস্থিত স্বায়ত্তশাসিত ক্রিমিয়া প্রজাতন্ত্র ইউক্রেনের সীমান্তের মধ্যে পড়েছে।
ইউক্রেনের অধিকাংশ এলাকা কৃষিকাজের উপযোগী উর্বর সমভূমি নিয়ে গঠিত। ইউক্রেন খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। দেশটির অর্থনীতি উন্নত এবং এর কৃষি ও শিল্পখাত যথেষ্ট বড়।
মধ্যযুগে ইউক্রেন অঞ্চলটি পূর্ব স্লাভীয় সংস্কৃতির একটি প্রধান কেন্দ্র ছিল। খ্রিস্টীয় ৯ম শতক থেকে ইউক্রেনের উত্তর অংশ কিয়েভান রুশ নামক একটি মুক্ত সংঘের অংশ ছিল। যা পরবর্তীতে ইউক্রেনীয় আত্মপরিচয়ের ভিত্তিতে স্থাপন করা হয়।
কিয়েভান রুশ ছিল প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব স্লাভীয় রাষ্ট্র। ১৩শ শতকে এটি অনেকগুলি উপরাজ্যে ভাগ হয়ে যায়। এরপর মঙ্গোলীয়রা আক্রমণে অঞ্চলটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বহু শতাব্দী ধরে বিভিন্ন সময়ে ইউক্রেন বিভিন্ন বিদেশি শক্তির দখলে ছিল। এদের মধ্যে আছে – পোল্যান্ড -লিথুয়ানিয়া রাষ্ট্রজোট, অষ্ট্রিয়া – হাঙ্গেরি সাম্রাজ্য, উসমানীয় সাম্রাজ্য ও রুশ জার সাম্রাজ্য।
১৭শ ও ১৮শ শতকে এখানে কসাক রাজ্যের উত্থান ঘটলেও পরবর্তীতে তা পোল্যান্ড ও রাশিয়ার মধ্যে ভাগ হয়ে যায়।
রুশ বিপ্লবের পরে ১৯১৮ খৃষ্টাব্দে ইউক্রেনে একটি জাতীয়তাবাদী আত্মনিয়ন্ত্রণবাদী আন্দোলনের জের ধরে এ দেশে একটি বলশেভিক সাম্যবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর ইউক্রেন গণপ্রজাতন্ত্র রাষ্ট্রে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯২২ খৃষ্টাব্দে ইউক্রেনীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সোভিয়েত ইউনিয়নের চারটি প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের একটি ছিল। ১৯৯১ খৃষ্টাব্দের ইউক্রেন স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং এক গণভোটে এটির প্রতি জনগণ সমর্থন জানায়। ইউক্রেনের এই ঘোষণা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে একটি বড় ভূমিকা রেখেছিল।
ক্ল্যপ্ল্যাভিক ক্র্যাজ বা ক্রাজনা ভাষা হতে ইউক্রেন শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ ভূমি বা দেশ।
ইউক্রেন কৃষিসম্পদে ভরপুর। একসময় ইউক্রেনকে সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘রুটির ঝুড়ি’ বলা হতো। ইউক্রেনে রয়েছে চার কোটি ২০ লক্ষ হেক্টর কৃষিজমি, যেটা পুরো ইউরোপের ২২ ভাগ।
ইউক্রেনের উল্লেখযোগ্য শতর হলো – মেলিতোপল, মারিউপল, চেনিহিত, খারখত, লাটস্ক, ভিভ, চেনোভৎস্কি, ক্রিভয়রগ, দোনেস্ক, লুগানস্ক, ঝিতোমির, ওডেসা -ইত্যাদি।
রাশিয়া –
রাশিয়ার প্রতিটি শহর মদের বারে পরিপূর্ণ
রাশিয়া বিশ্বের বা পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম দেশ। রাশিয়ার অন্য নাম হলো রুশ বা রশিয়া। তবে সরকারি ভাবে রুশ ফেডারেশন নামে পরিচিত।
রাশিয়ার অবস্থান পূর্ব ইউরোপ এবং উত্তর এশিয়া জুড়ে। এই দেশটি অর্ধ প্রেসিডেন্টসিয়াল ফেডারেল প্রজাতন্ত্র দ্বারা গঠিত – যা কিনা ৮৩ টি ফেডারেল বিষয় দ্বারা গঠিত।
রাশিয়ার উত্তর -পশ্চিম থেকে দক্ষিণ -পূর্ব পর্যন্ত নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ড – যা কিনা উভয় দেশই কালিনিনগ্রাদ অব্লাস্ত সীমান্ত দিয়ে যুক্ত। তাছাড়া রাশিয়ার সাথে বেলারুশ, ইউক্রেন, জর্জিয়া, আজারবাইজান, কাজাখস্তান, চীন, মঙ্গোলিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সাথে সীমান্ত সংযোগ আছে।
সাগরের মাধ্যমে জাপানের সাথে ও বেরিং প্রণালীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার সাথে রাশিয়ার সামুদ্রিক সীমানা রয়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়ায় রয়েছে পৃথিবীর মোট অবাসযোগ্য জমির এক অষ্টমাংশ।
রাশিয়া নামটি রুশ নামক মধ্যযুগীয় একটি রাষ্ট্র থেকে এসেছে যেখানকার অধিকাংশ মানুষ ছিল ইস্ট স্লাভ গোত্রের অন্তর্গত। পরবর্তী ইতিহাসে এই নামটি আরও বিশিষ্ট হয়ে ওঠে দেশটিকে এর জনগণ রুশকায়া যেমল্যা বলে ডাকতো। আর এর অর্থ হল রুশ ভূমি বা রুশ এর ভূমি। রাশিয়া ও এই রাষ্ট্র হতে উদ্ভুত রাষ্ট্রের নামের পার্থক্য করার জন্য আধুনিক ইতিহাসে একে কিয়েভান রুশ বলে ডাকা হয়। রুশ নামটি রুশ নামের একটি গোত্র থেকে এসেছে যারা ছিল মুলত ভারাঞ্জিয়ানদের একটি দল অর্থাৎ সুইডিশ ভাইকিং এবং এরাই প্রথম রুশ নামে একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।
রাশিয়ার প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ হলো –
কেন্দ্রীয় – মস্কো ; উত্তর -পশ্চিম – এর উল্লেখযোগ্য শহরগুলি হলো সেন্ট পিটার্সবার্গ, কালিনিনগ্রাদ।
ভলগা – ভলগার উল্লেখযোগ্য শহর হলো নিঝনি নোভগরদ, কাজান, সামারা। দক্ষিণ – দক্ষিণের উল্লেখযোগ্য শহর হলো রোস্তভ ন্য -দানু, ভলগোগ্রাদ, সোচি। উরাল – এ প্রশাসনিক অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য শহর হলো ইয়েকাতেরিনবুর্গ।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর নবম বৃহত্তম দেশ কাজাখস্তান
রাশিয়ার ব্যাপক খনিজ ও জ্বালানি সম্পদ একে বিশ্বের বৃহত্তম মজুদদার হিসেবে তৈরি করেছে। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ। দেশটি পারমাণবিক শক্তি সম্পন্ন পাঁচটি স্বীকৃত দেশের মধ্যে অন্যতম এবং দেশটিতে বিশ্বের বৃহত্তম ধ্বংসাত্মক অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে।
রাশিয়া একটি পরাক্রমশালী রাষ্ট্র যেটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য।
মস্কো – মস্কো হলো রাশিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী। নগরীটি মধ্য রাশিয়ার কেন্দ্রশাসিত জেলাতে মস্কভা নদীর তীরে অবস্থিত। মস্কো নগরীর জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ। মস্কো মহানগর এলাকার আয়তন ২৬ হাজার বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যার হিসাবে মস্কো ইউরোপ মহাদেশের বৃহত্তম নগরী, বৃহত্তম পৌর এলাকা এবং বৃহত্তম মহানগর এলাকা।
রাশিয়ার উল্লেখযোগ্য শহর হলো – সোচি, ইভানোভো, ইয়েক্যাটারিনবার্গ, ভেলিকি নোভগরোদ, ভ্লাদিভোস্টক, নিজনি নোভগরোদ, ইর্কুটস্ক, কাজান, ভার, স্মোলেনস্ক, তুলা, উলিয়ানভস্ক, ওরেল, কুর্স্ক, ভোরোনেজ, পেনজা, সামারা, উফা, ভোলগাগ্রাদ।
সোচি শহরটি কৃষ্ণসাগরের তীরে অবস্থিত। শহরটিতে রয়েছে অসংখ্য সমুদ্র সৈকত। সমুদ্রপ্রেমী ও ক্রীড়াবিদদের পছন্দের শহর হলো এই সোচি। গোটা শহর জুড়ে মদের বারের ছড়াছড়ি।