বাংলাদেশ থেকে বেলারুশ কাজের ভিসা নিয়ে যাত্রার স্বপ্ন দেখছেন? পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি তার সাশ্রয়ী জীবনযাত্রা, নিরাপদ পরিবেশ এবং রাশিয়ার সাথে অর্থনৈতিক সংযোগের জন্য আকর্ষণীয়। যদিও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থনীতিতে চাপ রয়েছে। তবুও কৃষি, কনস্ট্রাকশন ও আইটি সেক্টরে চাকরির সুযোগ প্রচুর। এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো বেলারুশ কাজের ভিসার প্রসেসিং নিয়ম, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, খরচের হিসাব, বেতনের কাঠামো, সর্বনিম্ন মজুরি এবং বাংলাদেশিদের জন্য চাহিদাসম্পন্ন চাকরির সুযোগ।
বেলারুশের পরিচয় ও বাংলাদেশিদের জন্য সুযোগ
বেলারুশ পূর্ব ইউরোপের একটি মধ্যম আয়ের দেশ, যেখানে বেকারত্বের হার কম হলেও দক্ষ শ্রমিকদের বিদেশী সুযোগ খোঁজার প্রবণতা রয়েছে। রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম জীবনযাত্রার খরচ (প্রতি মাসে ৫০০-৮০০ ডলার) এটিকে প্রবাসীদের জন্য আদর্শ করে তোলে। বাংলাদেশ থেকে অনেকে বেলারুশ কাজের ভিসা নিয়ে এখানে যান, বিশেষ করে কনস্ট্রাকশন এবং ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে। দেশটি তুলনামূলক নিরাপদ কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সতর্কতা অবলম্বন করুন। ২০২৫ সালে ই-ভিসা সিস্টেম চালু হয়েছে, যা শর্ট-টার্ম ভিজিটকে সহজ করেছে, কিন্তু ওয়ার্ক ভিসার জন্য টাইপ ডি ভিসা প্রয়োজন।
আরও জানতে পারেনঃ ফিনল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে ২০২৫
বেলারুশ কাজের ভিসা পাওয়ার নিয়ম এবং ধাপসমূহ
বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে বেলারুশ কাজের ভিসা পাওয়া যায় না তবে বেসরকারিভাবে এটি সম্ভব। প্রথম ধাপ হলো বেলারুশের কোনো কোম্পানি থেকে জব অফার পাওয়া। এরপর কোম্পানি থেকে ইনভাইটেশন লেটার এবং এমপ্লয়মেন্ট কনট্রাক্ট সংগ্রহ করুন। এই ডকুমেন্টস নিয়ে আপনি নিজে প্রসেসিং শুরু করতে পারেন। বাংলাদেশে বেলারুশ দূতাবাস না থাকায়, বিশ্বস্ত এজেন্সির সাহায্যে ভারতের নিকটবর্তী দূতাবাসে (যেমন দিল্লি) আবেদন করতে হবে। প্রক্রিয়াটি অনলাইনে শুরু হয় mfa.gov.by সাইটে ও প্রসেসিং সময় ১৫-৩০ দিন। ২০২৫ সালে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য হেলথ সার্টিফিকেট ও ক্রিমিনাল রেকর্ড চেক বাধ্যতামূলক। ভিসার মেয়াদ সাধারণত ১ বছর যা নবায়নযোগ্য।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা
বেলারুশ কাজের ভিসার জন্য নিম্নলিখিত ডকুমেন্টস সংগ্রহ করুন। এগুলো ছাড়া আবেদন অসম্পূর্ণ হবে:
- বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে)।
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি (২-৪ কপি)।
- ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র।
- জব অফার লেটার এবং কাজের চুক্তিপত্র।
- পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট।
- মেডিকেল রিপোর্ট এবং স্বাস্থ্য বীমা (কভারেজ কমপক্ষে ৩০,০০০ ইউরো)।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট।
- স্কিল এবং ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট।
- আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ (ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট)।
এই ডকুমেন্টস সব ইংরেজি বা রাশিয়ান ভাষায় অনুবাদ করে নোটারাইজ করান।
বেলারুশ যেতে কত খরচ লাগে?
বেলারুশ কাজের ভিসা প্রসেসিংয়ের খরচ বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে। অফিসিয়াল ভিসা ফি ৬০ ইউরো (প্রায় ৮,০০০ টাকা) কিন্তু বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় (ট্রাভেল, এজেন্সি ফি, মেডিকেল টেস্ট) আনুমানিক ৫ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ টাকা লাগতে পারে। দালালের মাধ্যমে খরচ বাড়তে পারে, তাই নিজে করলে সাশ্রয়ী। টিকিট ও প্রাথমিক থাকার খরচ যোগ করলে মোট ৭-১০ লক্ষ হতে পারে। ২০২৫ সালে ই-ভিসা অপশন শর্টলিস্টকে সস্তা করেছে।
আরও জানতে পারেনঃ উজবেকিস্তানের বেতন কত
বেলারুশে বেতন এবং সর্বনিম্ন মজুরি
বেলারুশে বেতন শিক্ষা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। বেলারুশ কাজের ভিসা নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশী শ্রমিকরা গড়ে ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা (১,৫০০-৩,০০০ BYN) উপার্জন করেন। সর্বনিম্ন মজুরি ২০২৫ সালে ৭২৬ BYN/মাস (প্রায় ২৫,০০০ টাকা), যা ৪০ ঘণ্টার সপ্তাহীয় কাজের জন্য। বাংলাদেশীদের জন্য এটি থেকে বেশি পাওয়া যায় বিশেষ করে দক্ষ কাজে। গড় বার্ষিক বেতন ২৭,০০০ BYN (প্রায় ৯২,০০০ টাকা/মাস)।
বেলারুশে কোন কাজের চাহিদা বেশি এবং বেতন বেশি?
বেলারুশে বেলারুশ কাজের ভিসাধারীদের জন্য চাহিদাসম্পন্ন সেক্টরগুলো হলো কৃষি, কনস্ট্রাকশন, ফ্যাক্টরি, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, ক্লিনিং এবং ড্রাইভিং। ২০২৫ সালে আইটি এবং হেলথকেয়ারও উন্নতি পেয়েছে। উচ্চ বেতনের কাজের মধ্যে রয়েছে রাজমিস্ত্রি (৭০,০০০+ টাকা), প্লাম্বার, ওয়েল্ডার, ইলেকট্রিশিয়ান, টাইলস মিস্ত্রি, মেশিন অপারেটর, প্যাকেজিং, কৃষি শ্রমিক এবং ট্যাক্সি ড্রাইভার। এই কাজগুলোতে অভিজ্ঞতা থাকলে ৮০,০০০-১,২০,০০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়।
শেষ কথা
বেলারুশ কাজের ভিসা নিয়ে ইউরোপের এই সুন্দর দেশে যাত্রা আপনার জীবন বদলে দিতে পারে, কিন্তু সঠিক প্রস্তুতি এবং অফিসিয়াল সোর্স চেক করুন। নিরাপদ যাত্রা এবং সফল ক্যারিয়ার কামনা করি! আরও তথ্যের জন্য কমেন্ট করুন।