বাল্টিক সাগরের উপকূলে স্বর্গের দেশ ফিনল্যান্ড


ফিনল্যান্ড স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ। শিল্পন্নোত এই দেশের জিডিপি’র হার জার্মানীর চেয়েও বেশি। লিখছেন দুই বাংলার অন্যতম সেরা ভ্রমণ লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন

Table of Contents

ফিনল্যান্ডের মেরু অঞ্চলে মে থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রায় সব সময় দিন থাকে। ‘মধ্যরাতের সূর্যের’ এই দিনগুলিতে ফিনল্যান্ডের নয়নাভিরাম উপকূলীয় এলাকাগুলিতে হাজার হাজার ট্যুরিস্ট নৌকা নিয়ে বেড়াতে আসে। তাছাড়া ফিনল্যান্ডের মধ্য ভাগের বনভূমিতে অনেক ভ্রমণকারী রোমাঞ্চকর অভিযানের টানে ছুটে আসে।

ফিনল্যান্ড একটি নিম্নভূমি অঞ্চল। কয়েক হাজার বছর আগেও এই অঞ্চলটি বরফে ঢাকা ছিল। বরফের চাপে এখানকার ভূমি স্থানে স্থানে দেবে বা ডেবে গিয়ে হাজার হাজার হ্রদের সৃষ্টি করে।

ফিনল্যান্ড দেশের লোকজন নিজেদেরকে সুওমি বলে ডাকে। সুইমি শব্দের অর্থ হ্রদ ও জলাভূমির দেশ।

ফিনল্যান্ডের উত্তর দিক স্থলবেষ্টিত। এর উত্তরে নরওয়ে ও পূর্বে রাশিয়ার সাথে এর সীমান্ত আছে। এর দক্ষিণে ফিনল্যান্ড উপসাগর এবং পশ্চিমে বথনিয়া উপসাগর। ফিনল্যান্ডের দক্ষিণ -পশ্চিম উপকূলে হাজার হাজার ক্ষুদ্র, পাথুরে দ্বীপ আছে। এদের মধ্যে কতগুলিতে মনুষ্য বসতি আছে। এরমধ্যে বথনিয়া উপসাগরের মুখে অবস্থিত অলান্দ দ্বীপপুঞ্জটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ফিনল্যান্ড দেশটি ৭০০ বছর ধরে সুইডেনের অধীনে ছিল। ১৮০৯ খৃষ্টাব্দে এ দেশটি রুশদের করায়ত্ত হয়। রুশ বিপ্লবের পর ১৯১৭ খৃষ্টাব্দে ফিনল্যান্ড একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেয়।


উচ্চশিক্ষার জন্য ফিনল্যান্ডে অনেকগুলি বিশ্ববিদ্যালয়, অসংখ্য কলেজ এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ স্কুল রয়েছে।

ফিনল্যান্ড ইউরোপ মহাদেশের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত। এর এক তৃতীয়াংশ এলাকা সুমেরুবৃত্তের উত্তরে রয়েছে। এখানে ঘন সবুজ অরণ্য ও প্রচুর হ্রদ রয়েছে। প্রাচীরঘেরা প্রাসাদের পাশাপাশি ফিনল্যান্ডে আছে অত্যাধুনিক দালানকোঠা।

ফিনল্যান্ড দেশটির বনভূমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। এগুলিকে প্রায়ই ফিনল্যান্ডের ‘সবুজ সোনা’ নামে ডাকা হয়।

ফিনল্যান্ডের রাজধানী বসেছে হেলসিঙ্কিতে। এটি ফিনল্যান্ডের বৃহত্তম শহর।

ফিনল্যান্ডের সরকারি ভাষা – ফিনীয় ও সুয়েডীয়।

এ দেশের মানুষের ধর্ম -লুথেরান।

ফিনল্যান্ডকে বলা হয় স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশ। এ দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ হিসেবে পৃথিবী খ্যাত।

লেভি – প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে মনোরম স্থান ফিনল্যান্ডের লেভি। এই শহরটি সারা বছর ধরে বরফে আচ্ছাদিত থাকে। এই শহরে গিয়ে স্কিইং ও স্নোবোর্ডিং খেলা যায়। অসংখ্য রিসোর্ট রয়েছে লেভিতে।

হেলসিংকি_ফিনল্যান্ড

ট্যামপেয়ার – এটি ফিনল্যান্ডের বড় শহর হলেও এখানে গেলে দেখা যায় জঙ্গল, পার্ক, অ্যাডভেঞ্চার পার্ক।

অ্যালান্ড আর্কিপেলাগো – এটি একটি দ্বীপ শহর। বাল্টিক সাগরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ হল – ম্যারিটাইম মিউজিয়াম, ক্যাসটেলহলম দুর্গ। এই দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ।

হেলসিঙ্কি – এই রাজধানী শহরটি পৃথিবীর সকল পর্যটকের জনপ্রিয় স্থান। হেলসিঙ্কির দর্শনীয় স্থান হল – গীর্জা লুথারান ক্যাথেড্রাল, দ্য চার্চ ইন দ্য রক।

ফিনিশ লেকল্যান্ড – ফিনিশ লেকল্যান্ডে ৫৫ হাজার হ্রদ রয়েছে। এই হ্রদগুলি দেখার জন্য সারা বছর ধরে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে ফিনিশ লেকল্যান্ডে। সেন্ট ওলাফের দুর্গ ফিনিশ লেকল্যান্ড এলাকায় অবস্থিত। এটি পূর্ব ফিনল্যান্ডে পড়েছে।

ফিনল্যান্ডের আরও উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় শহর হল –
রোভ্যানিয়েমি, স্যাভোনলিনা, পরভো, তুর্কু, ভাসা, কাকোলা, মিকেলি, টাম্পেরে, কেমি।

ফিনল্যান্ড ভ্রমণ করে আমার হৃদয়ে জেগে উঠেছিল –
‘তুফান মেল যায়! তুফান মেল যায়! / তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে ময়নামতীর ঘাট এড়িয়ে / কাশের বনে ঢেউ খেলিয়ে বংশীবটের ছায়, যায় যায় যায়! / কার ফুলে যে হারায় মধু কার ঘরে যে এল বধু – / কান্নাহাসির ইন্দ্রধনুর রং লাগাতে চায়, যায় যায় যায়! / অজগরের সেই তো মাসি চমক দিয়ে বাজায় বাঁশি, / সবুজ সোনা রঙের বুকে ঝলকানি লাগায় যায় যায় যায়’ গানের এ কথাগুলি।