আইসিসির টেষ্ট ক্রিকেট রেংকিংয়ে পয়েন্টের হিসাব যেভাবে করা হয়


 

টেষ্ট ক্রিকেটে নবীনতম সদস্য আফগানিস্তান। সাকুল্যে খেলেছে তিনটি টেষ্ট। তবে র‍্যান্কিংয়ে নীচের সারিতে অবস্থানরত বাংলাদেশের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছিল কিছুদিন থেকেই। শেষ পর্যন্ত প্রায় সেই আশংকাই সত্যি হয়ে যাচ্ছিল। বাংলাদেশকে একবার পেছনে ফেলেছিল আফগানিস্তান। সম্প্রতি বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির দেয়া সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী বাংলাদেশকে পিছনে ফেলে একধাপ উত্তরণ ঘটেছিল তাদের। শীর্ষ দশটি দেশের তালিকায় আফগানিস্তান উঠেছিল নয়ে। বাংলাদেশে এক ধাপ পিছিয়ে তালিকার সর্বশেষ অর্থাৎ দশম স্থানে অবনমিত হয়েছিল।

আইসিসির সব দলগুলোর টেষ্ট ক্রিকেট র‍্যাংকিং নিয়মিতভাবে আপডেট করা হয়ে থাকে আইসিসি থেকে। সর্বশেষ তালিকায় দেখা যায় টেষ্টে প্রথম স্থান অর্জন করেছে নিউজিল্যান্ড। ২৭ টি ম্যাচ খেলে তাদের রেটিং নাম্বার ১১৮। সর্বোচ্চ ৩১৯৮ পয়েন্ট পেয়েছে তারা। এরপরই আছে অষ্ট্রেলিয়া। ২৬ ম্যাচে তাদের রেটিং ১১৬। এরচেয়ে দুই পয়েন্ট কম নিয়ে রেটিংয়ে তৃতীয় স্থানে আছে ভারত।

টেষ্টে ১৭ ম্যাচে বাংলাদেশের রেটিং ৫৫। পয়েন্ট ৯৩৯। আফগানিস্থানের ৩ ম্যাচে পয়েন্ট ১৭০। কিন্তু বাংলাদেশের চেয়ে ২ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে তাদের অর্জিত রেটিং ৫৭। এজন্যই তারা বাংলাদেশকে টপকে গিয়েছিল। প্রশ্ন হল ক্রিকেটের রেটিং কীভাবে করা হয়?

এব্যাপারে আইসিসির নিয়ম অনুসারে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রত্যেকটি দলগুলোকে আইসিসির পক্ষ থেকে কিছু খেলা বরাদ্ধ করে দেয়া হয় কে কোন দেশের বিপক্ষে খেলবে। তারপর সেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সবগুলো খেলার ফলাফলকে গড় অনুযায়ী ভাগ করে পয়েন্ট বরাদ্ধ করা হয়। সেই গড় পয়েন্ট অনুযায়ীই সবগুলো দেশের রেটিং অনুযায়ী র‍্যাংকিং প্রকাশ করা হয়।

তবে পয়েন্ট বরাদ্ধের কিছু নিয়মাবলী আছে। তালিকার দুর্বল দলগুলো যদি তাদের উপরের কোন দলকে হারিয়ে দেয় তাহলে সেই দলটি বেশি পয়েন্ট পায়। বেশি শক্তির একটি দলের বিরুদ্ধে জয়কে তালিকার পিছনে থাকা দলের জয়কে বড় করে দেখা হয়। আর তালিকায় নীচের দিকে থাকা দলকে হারালেও র‍্যাংকিংয়ে উপরে থাকা দলের লাভ হয় সামান্যই!

দুই দলের সামর্থ্যের মানদন্ড গোনায় ধরা হয় তাদের মধ্যকার র‍্যাংকিংয়ের তারতম্য অনুসারে। আর অর্জিত পয়েন্টের আপডেট প্রকাশ করা হয় সিরিজ শেষে, সিরিজের মাঝামাঝি নয়।

সিরিজ জয়ে কী বোনাস আছে?

একটি সিরিজ জয়ের জন্য বিজয়ী দল অতিরিক্ত আরেকটি ম্যাচে জয়ী হওয়ার সমান পয়েন্ট লাভ করে। অর্থাৎ তিন ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয়ী হলেও বিজয়ী দল ৩-১ ম্যাচে জয়ী হওয়ার সমান পয়েন্ট অর্জন করবে।

প্রতিপক্ষ দেশের মাঠিতে জয়ী হলে কী বিশেষ সুবিধা আছে?

না, প্রতিপক্ষের মাঠিতে জয়ী হলেও দেশের মাঠিতে জয়ী হবার চেয়ে বেশি সুবিধা পাবে না কোন দল। শুধুমাত্র র‍্যাংকিং অনুযায়ী দলগুলোর শক্তির তারতম্য বিবেচনায় আসবে।

খর্ব শক্তির দল নিয়ে খেললে র‍্যাটিং পয়েন্ট কমবে কি-না

না, দুই দলের খেলার আগে যে দিকটা দেখা হয় সেটা হল তাদের র‍্যাটিংয়ের অবস্থান, খর্ব শক্তির দল নিয়ে খেললেও কোন সমস্যা হবে না। তবে দুর্বল বা খর্ব শক্তির দল নিয়ে খেলে কোন দল যদি হেরে যায় তবে তাদের প্রতিদ্বন্দী দলটি সম্পূর্ন জয়ের সম্পূর্ন পয়েন্ট সুবিধা পাবে যেভাবে পূর্ণ শক্তির দলের বিরুদ্ধে খেললে পেত।

পয়েন্টের হিসাব কীভাবে করা হয়?

প্রত্যেকটি দল জয়ের জন্য সম্পূর্ণ এক পয়েন্ট পাবে। অর্ধেক পয়েন্ট (.৫) পাবে ড্রয়ের জন্য এবং সিরিজ জয়ের জন্য অতিরিক্ত আরেকটি পয়েন্ট পাবে জয়ী দল। পাঁচ ম্যাচের সিরিজের ২-১ এ জয়ী দল পাবে ৪ পয়েন্ট (দু’টি জয় থেকে ২, ২ ড্র থেকে ১ এবং বোনাস ১)। আর পরাজিত দল পাবে ২ পয়েন্ট ( একটি জয় থেকে ১, দুটি ড্র থেকে ১)।

সুতরাং উপরে বর্ণিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মাঠিতে খেলে টেষ্টে টাইগার বাহিনীকে হারালেও এর জন্য অতিরিক্ত পয়েন্ট পায়নি আফগানিস্তান। তবে যেহেতু দুই দলের এক টেস্ট ম্যাচের সিরিজ শুরুর আগে র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ ছিল আফগানিস্থানের উপরে থাকা দল, সেই অনুযায়ী তারা লাভ করেছে বোনাস এক পয়েন্ট। অর্থাৎ বাংলাদেশকে হারানোর জন্য এক পয়েন্ট এবং উপরে থাকা দলকে হারানো জন্য আরেক পয়েন্ট। এই দুই পয়েন্টের ব্যবধানই শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তানকে সাময়িকভাবে সাহায্য করেছে বাংলাদেশকে টপকে র‍্যাংকিংয়ে এগিয়ে যেতে। তবে এখানে আইসিসির রেটিংয়ে কিছুটা ভুল হয়েছিল। সেটা বাংলাদেশের একজন সাংবাদিক আইসিসির নজরে আনলে তারা সবগুলো দলের রেটিং আবার পর্যালোচনা করে। বাংলাদেশ আবার পুনর্বহাল হয়েছে আগের সেই নবম স্থানে।

আরও পড়ুন:সাকিব আল হাসান: ক্ষুরধার ক্রিকেটীয় মস্তিষ্কই কী তাঁর সবচেয়ে বড় অস্ত্র?

বাংলাদেশ অচিরেই দেশের মাঠিতে টেষ্ট সিরিজ খেলবে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, যারা র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের উপরে আছে। তাদের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ী হতে পারলে মিলবে অতিরিক্ত বা বোনাস পয়েন্ট যা হতে পারে বাংলাদেশের র‍্যাংকিং উপরের দিকে বাড়ানোর একটি বড় সুযোগ।