টি-২০ তে অবশেষে ক্রিকেট পরাশক্তি অষ্ট্রেলিয়াকে মাঠিতে নামিয়ে আনল বাংলাদেশ। করোনার অজুহাত দেখিয়ে সব রকম ফায়দা নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। টি-টুয়েন্টিতে ক্যাঙারু বাহিনীকে ঘায়েল করে টাইগারদের সিরিজ জয় অনায়াসে ।
ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে বাংলাদেশের সাফল্য নেই তেমন একটা। অথচ অষ্ট্রেলিয়া বিশ্বের এক নাম্বার দল। টি-২০ ক্রিকেটে তাদের সাফল্য ঈর্ষণীয়। ঘরোয়া বিগ ব্যাশ লীগ আইপিএলের পরেই অন্যতম জমজমাট ক্রিকেট লীগ। এমনকি আইপিএলেও ছড়ি ঘোরান অষ্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা। সেজন্যই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অষ্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঘরে বাইরে যেকোন জয় তাৎপর্যপূর্ণ।
শুক্রবার বিকেলে মিরপুর ষ্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ফেভারিট হিসাবেই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। পরপর দুইম্যাচে জয়ালাভের কারনে মানসিকভাবে ছিল অনেক নির্ভার। যদিও আগের দুই ম্যাচই ছিল লো-স্কোরিং। এই ম্যাচে তাই রানের ফুলঝুরি দেখার প্রত্যাশা ছিল দর্শকদের।
কিন্তু টি-২০ ম্যাচে বাংলাদেশের বরাবর দুর্বলতার জায়গা দলে বিগ হিটারের অভাব। ধারাবাহিকভাবে সফল এমন ব্যাটসম্যানের অভাব। এই ম্যাচেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। টেনেটুনে লড়াই করার মত স্কোর করতে পেরেছিলেন ব্যাটাররা।
টসে জিতে ব্যাটিং নেন অধিনায়ক রিয়াদ। বৃষ্টিভেজা মাঠ অনেক স্লো ছিল। অপেনাররা ব্যাট করতে নেমেই পড়েন বিপদে। আড়াই ওভারের মধ্যেই দুই উদ্বোধনী ব্যাটার ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। ১৩ বল খেলে দুইজনের সম্মিলিত অবদান ৩ রান!
প্রথম বলেই উইকেট সাকিবের, আইপিএলে কলকাতার শুভসূচনা
এরপর ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে যান বাংলাদেশের দুই মহারথী। রিয়াদ একপ্রান্ত আগলে রাখলে সাকিব আল হাসান রান বাড়িয়ে নিতে মনোযোগী হন। মাত্র ১৭ বলে ২৬ রান তুলে নেন সাকিব। চারটি বাউন্ডারি সমেত এই রান ছিল পরিসি্থিতি অনুযায়ী মহামূল্যবান।
এডাম জাম্পার বলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন সাকিব। কিন্তু দলের রান রেটে তাতে তার কোন ছাপ পড়েনি। তরুন আফিফ আরেকটি ক্যামিও খেলে যান দলের জন্য। ১৩ বলে দ্রুতলয়ে ১৯ রানের ইনিংসে একটি করে চার ও ছয় মারেন আফিফ।
এরপর উদীয়মান শামীম ও উইকেট রক্ষক সোহান অল্প রানে আউট হয়ে গেলে বাংলাদেশের বড় স্কোর গড়ার আশা ম্লান হয়ে যায়। যদিও রিয়াদ উইকেটে ছিলেন। কিন্তু অন্যপ্রান্তে যোগ্য সঙ্গী না পাওয়ায় সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন বাংলাদেশের দলনায়ক। ৫২ বলে টি-২০তে নিজের পঞ্চম অর্ধশতক তুলে নেয়ার মোক্ষম উপায় হিসাবে বেছে নেন সিরিজ নির্ধারনী এই ম্যাচকেই।
মাহমুদউল্লাহর ইনিংসে বাউন্ডারি ছিল ৪টি। তবে ফিফটি করার পরের বলেই বোল্ড হয়ে যান রিয়াদ। ফলে আরেকটি মড়ক লাগে বাংলাদেশের ইনিংসে। অভিষিক্ত অস্ট্রেলিয়ান পেস বোলার নাথান এলিস রিয়াদের পর আউট করেন মেহদী ও মুস্তাফিজকে। পরিস্থিতি অনুযায়ী দুইজনেই বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হন।
ইনিংসের শেষ তিন বলে তিন উইকেট। সাড়ে তিন ওভার বল করার পরেও উইকেট শুন্য অবস্থায় ৩৪ রান দিয়েছিলেন এলিস। তাতে অভিষেকটা বেশ ম্যাড়ম্যাড়ে দেখাত। সেই খেদ মেটাতেই কীনা বাংলাদেশের ইনিংসের শেষ তিন বলে পেয়ে গেলেন হ্যাট্রিক। আন্তর্জাতিক টি-২০ এরিনায় স্মরণীয় হয়ে থাকল তার সূচনাপর্ব।
আরও পড়ুন: কোহলির বদলে রোহিতেই কি বদলাবে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাস?
টি-২০তে ১২৮ রানের ছোট টার্গেটে অষ্ট্রেলিয়ার শুরু ছিল চমৎকার। যদিও দলীয় আট রানে অপেনার ম্যাথ্যু ওয়েড বিদায় নেন ১ রানে। দ্বিতীয় উইকেটে বেন ম্যাকডর্মেট আর মিশেল মার্শ দলের রানকে নিয়ে যান ৭১এ। তবে ধীরলয়ে খেলতে গিয়ে আস্কিং রানরেটের সাথে পাল্লা দিয়ে উঠতে পারেন নি অষ্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা। হাতে উইকেট থাকার পরও ৭১ রান তুলতে তারা খেলেছেন ১৩.২ বল। সাকিব আল হাসানের বলে বোল্ড হয়ে বেন ফিরলেও বাংলাদেশের গলার কাটা হয়ে বিধে ছিলেন মার্শ। ভুগিয়েছেন বেশ।
৪৭ বলে ৫১ রানের পথে ৬টি বাউন্ডারি আর একটি ছক্কা মেরেছেন মার্শ। শরীফুলের বলে আুত হয়ে তিনি প্যাভিলিয়নে ফেরার সময় অষ্ট্রেলিয়ার হাতে ৬ উইকেট নিয়ে দরকার ছিল ৩৪ রান। হাতে বল ছিল ১৭টি। কিন্তু এই ওভারে শরীফুল ১১ রান খরচ করলে ম্যাচে বিপুলভাবে ফিরে আসে অষ্ট্রেলিয়া।
মুস্তাফিজ অবশ্য আজ অন্য কিছুই ভেবেছিলেন। দুই ওভারে ২৩ রান দরকার অষ্ট্রেলিয়ার। কিন্তু ১৯তম ওভারে বল করতে এসে দিলেন মাত্র একরান। এই জায়গাতেই মূলত ম্যাচ হেরে যায় অষ্ট্রেলিয়া। কাটার মাষ্টারের বলে ব্যাটই ছোয়াতে ব্যার্থ হচ্ছিলেন অষ্ট্রেলিয়ান ব্যাটাররা।
মুস্তাফিজ স্মরণীয় বোলিং নৈপূণ্য দেখিয়েছেন এই ম্যাচে। ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৯ রান। উইকেটের দেখা না পেলেও টিটুয়েন্টিতে এই বোলিং ফিগার যেকোন বোলারের জন্য পরম আরাধ্য। শরিফুলের দুই উইকেটে আর সাকিব ও নাসুমের এক উইকেট প্রাপ্তি অবশ্যই ব্যক্তিগত অর্জন। তবে বাংলাদেশের দলীয় অর্জন হয়ে থাকবে হাতে পর্যাপ্ত উইকেটে থাকা সত্বেও অষ্ট্রেলিয়াকে লো স্কোরিং ম্যাচে টার্গেটের নীচে বেঁধে রাখা। টি-২০ তে খুব অল্প সংখ্যক দলই পেরেছে এমন সাফল্য দেখাতে!