জম্পেশ লড়াই! দিল্লীকে হারিয়ে আইপিএলের ফাইনালে কলকাতা নাইট রাইডার্স


জম্পেশ লড়াইয়ে দিল্লীকে হারিয়ে আইপিএলের ফাইনালে কলকাতা নাইট রাইডার্স। সহজ ম্যাচ শেষ পর্যন্ত জিততে হল কঠিন ঘাম ঝরিয়ে! অবশ্য হয় জেতা না হয় বিদায় নেয়া এমন ম্যাচে হারতে চাইবে কে। শেষ বল পর্যন্ত হার না মানা লড়াই চালিয়ে হার মেনেছে দিল্লী। যোগ্যতর দল হিসাবে ফাইনালে পৌঁছেছে কলকাতা।

আইপিএলের তৃতীয় প্লেঅফ ম্যাচে বুধবার দিল্লীর বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ের প্রত্যয় নিয়ে নেমেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। লীগ পর্ব শেষে কলকাতা ছিল চার নাম্বারে। আর দিল্লী শীর্ষ স্থানে। প্রথম প্লে অফ ম্যাচে চেন্নাইয়ের কাছে হেরে গেলেও দিল্লী আরেকটি সুযোগ পেয়েছিল ফাইনালে যাবার। কিন্তু আগের প্লেঅফে রয়েল চ্যালেন্জারস বেঙ্গালুরুকে বিদায় করে দেয়া কলকাতা দারুন দলীয় সংহতি নিয়ে নেমেছিল দিল্লীর বিরুদ্ধে।

কলকাতা এ মৌসুমে তাদের সেরা খেলোয়াড় আন্দ্রে রাসেলের সার্ভিস পায়নি তেমন একটা। তারপরও তুলনামুলক তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে দারুন সাফল্য পেয়েছে দলটি। আইপিএল শুরুর প্রথম দিকে কলকাতা নাইট রাইডার্স তেমন একটা আলোচনায় ছিলনা ফেভারিট হিসাবে। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে সব হিসাব ওলটপালট হয়ে গেছে। টপ ফেভারিট মুম্বাই ইন্ডিয়ানস বিদায় নিয়েছে লীগপর্ব থেকেই।

KKR

টসে জিতে কলকাতার অধিনায়ক মরগ্যান দিল্লীকে ব্যাটিংয়ে পাঠান। প্রথম ওভারে সাকিব আল হাসান দেন মাত্র একরান। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারে খরুচে হয়ে ওঠেন সাকিব। ১২ রান উপহার দেন দিল্লীকে। চার ওভারে সাকিব দিয়েছেন ২৮ রান। উইকেট নেই। ম্যাচে সাকিবের একমাত্র সাফল্য প্রতিপক্ষের সেরা ব্যাটসম্যান শিখর দাওয়ানের একটি কঠিন ক্যাচ তালুবন্দী করা। এই ক্যাচকে অবশ্য ম্যাচের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: সাকিব আল হাসানকে দলে ফেরানোর ইঙ্গিত ম্যাককালামের

দিল্লীর টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা রান পেলেও পৃত্বী শ ছাড়া বাকিরা খেলেছেন ওয়ানডে ষ্টাইলে। শ করেছেন ১২ বলে ১৮। শেষদিকে শিমরন হেটমায়ার যোগ করেন ১০ বলে ত্বরিৎ ১৮ রান।  শ্রেয়াস আয়ারের ২৭ বলে ৩০ বাদ দিলে বাকিরা বলের তুলনায় রান করেছেন কম। শিখর ধাওয়ান ৩৯ বলে ৩৬, স্টয়নিস ২৩ বলে ১৮, রিষভ প্যান্ট ৬ বলে ৬। দিল্লীর রান তাই তেমন একটা স্ফীত হতে পারেনি।

ক্রেডিট তাই পেতেই পারেন কলকাতার বোলাররা। একটি ভাল ব্যাটিং সাইডকে ৭ রানের নিচে আটকে রাখাটা একটি বড় সাফল্যই। সেটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন কলকাতা নাইট রাইডার্স এর দুই ওপেনার। ৯৬ রানের উদ্বোধনী জুটি। ১২ ওভার দুই বলে! হাতে দশ উইকেট নিয়ে জিততে হলে কলকাতার দরকার ৪৬ বলে ৪১ রান। অতি আশাবাদিরাও ম্যাচে কলকাতার কোন অশনি সংকেত দেখেননি নিশ্চয়ই!

সেটা আরও সহজ হয়ে আসে টার্গেট যখন ২৫ বলে ১৩তে নেমে আসে। হাতে ৯ উইকেট। কে জানত একটু পরেই শুরু হচ্ছে আসল লড়াই! মরনপণ লড়াই। দিল্লীর বোলাররাও চমক দেখাতে শুরু করলেন তখনই।

রবীন্দ্র অশ্বিনের শেষ ওভারে কলকাতার টার্গেট ছিল ৭ রান। এর আগের ৩ ওভারে দিল্লীর বোলাররা খরচ করলেন মাত্র ৬ রান। উইকেট নিয়েছেন ৩টি। শেষ ওভারে অশ্বিন নিলেন আরও দুই উইকেট। খেলার অন্তিম মুহুর্ত। ২ বলে দরকার ৬ রান। উত্তেজনাপূর্ণ রুদ্ধশ্বাস মুহুর্ত। অশ্বিনের করা বল বিপুল বিক্রমে হাওয়ায় উড়িয়ে মারলেন রাহুল ত্রিপাঠি। সব আশংকা নিমিষে উড়িয়ে দিয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্স কে ফাইনালে নিয়ে গেলেন।

শুরুতে যেভাবে ব্যাট করছিলেন কলকাতার ব্যাটাররা তাতে এই ম্যাচে এমন নাটক দিবাস্বপ্ন ছিল। দলীয় ৯৬ রানে ভেংকটেশ আয়ার ফিরেন ৪১ বলে ৫৫ রান করে। ৩টি ছক্কার সাথে মেরেছেন ৪টি চার। শুভম্যান গিল খেলেছেন অ্যাংকর হিসাবে। বলপ্রতি রান তুলে নিয়ে যোগ করেছেন ৪৬ রান। ছক্কা ও চার মেরেছেন একটি করে। রানের টার্গেট সীমিত থাকায় নিতেশ রানাও খেলেছেন রয়েসয়ে। ১২ বলে ১২। কিন্তু বিপদ ডেকে এনেছিলেন তিনি নিজেই। নর্কিয়াকে তুলে মারতে গিয়ে।

sakib al hasan
সাকিব আল হাসান

এরপর মোটামুটি একটি দু:স্বপ্নের মধ্যদিয়ে গেছেন কলকাতার ব্যাটসম্যানরা। পরপর ৪ জন ব্যাটসম্যান ডাক মেরেছেন। এই তালিকায় আছেন দীনেশ কার্তিক, এউইন মরগ্যান, সাকিব আল হাসান এবং সুনীল নারায়ন। ভাগ্যিস রাহুল ত্রিপাঠি শেষ পর্যন্ত তীরে ভিড়িয়েছেন জয়ের তরী। তার ১১ বলে ১২ রানের মূল্য কতঠুকু এটা কলকাতা নাইট রাইডার্স ঠিকই মূল্যায়ন করবে।

ম্যাচশেষে মরগ্যানও প্রশংসা করলেন রাহুল ত্রিপাঠির। দলের সাফল্যে কোচসহ সবার অবদানের কথা উল্লেখ করলেন। যেভাবে শুরু করেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স তাতে এই ম্যাচে আমাদের আরও সহজ জয় প্রাপ্য ছিল। আমরা এখন ফাইনালে এবং আমরা খুবই উৎফুল্ল। রাহুল ত্রিপাঠি চিত্তাকর্ষক খেলা উপহার দিয়েছে। এটি আমাদের দলের অন্যতম সেরা একটি ক্ষেত্র,তরুনরা আসবে এবং নিজেকে উজাড় করে দিয়ে খেলবে। দলের সংশ্লিষ্টরা এরকম পরিবেশ সৃষ্টিতে সদা নিয়োজিত থাকেন। এই দলটি নিয়ে ফাইনালে আমরা আশাবাদী। আশা করি আমরা এই ষ্ট্রাটেজি প্রয়োগ করতে পারব।