কঙ্গো নদীর এক তীরে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ব্রাজাভিল আরেক তীরে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের রাজধানী কিনশাসা।
আফ্রিকা মহাদেশের কঙ্গো অঞ্চলটি কমপক্ষে তিন হাজার বছর আগে বান্টুভাষী উপজাতিদের দ্বারা প্রভাবিত ছিল। তারা কঙ্গো নদীর অববাহিকার দিকে অগ্রসর হয়ে বাণিজ্য সংযোগ তৈরি করেছিল।
বান্টু জাতির লোকেরা মূলত বাস্তুচ্যুত হয়েছিল এবং প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই অঞ্চলের প্রাচীনতম বাসিন্দা পিগমি জনগোষ্ঠীকে শোষণ করেছিল। কঙ্গো হচ্ছে একটি বান্টু জাতিগত গোষ্ঠী। তারা বর্তমান অ্যাঙ্গোলা, গ্যাবন ও গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের কিছু অংশ দখল করেছিল। সেই সঙ্গে ওই সকল দেশগুলোর মধ্যে জাতিগত ঘনিষ্ঠতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভিত্তি গঠন করেছিল।
বেশ কয়েকটি বান্টু রাজ্য, বিশেষ করে কঙ্গো, লোয়াঙ্গো এবং টেকের রাজ্যগুলো কঙ্গো নদী অববাহিকার দিকে নিয়ে যায় বাণিজ্যের কারণে।
পর্তুগিজ অভিযাত্রী ডিয়োগো কাও ১৪৮৪ খৃষ্টাব্দে কঙ্গোর মুখে পৌঁছেছিলেন। এরপর সেখানকার অভ্যন্তরীণ বান্টু সাম্রাজ্য এবং ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তারা বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করত। তারা বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদিত করত। এরই পাশাপাশি ইউরোপীয় বণিকরা পশ্চিমাঞ্চলের বন্দী ও দাসত্ব করা মানুষদের মধ্যেও এই ব্যবসা চালিয়ে যেত।
ট্রান্স আটলান্টিক বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে বহু শতাব্দী পরে, কঙ্গো নদীর তীরের অঞ্চলে ইউরোপীয় উপনিবেশ শুরু হয় – তা শুরু হয়েছিল ১৯ শতকের শেষের দিকে।
ফরাসি ঔপনিবেশিক যুগ শুরু হয় ১৮৮০ খৃষ্টাব্দ থেকে।
কঙ্গো পূর্বে নিরক্ষীয় আফ্রিকার ফরাসি উপনিবেশের অংশ ছিল। এই কঙ্গো উপনিবেশটি প্রথমে ফরাসি কঙ্গো নামে পরিচিত হয়। তারপর ১৯০৩ খৃষ্টাব্দে মধ্য কঙ্গো নামে পরিচিতি পায়।
কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ১৯৫৮ খৃষ্টাব্দের ২৮ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৬০ খৃষ্টাব্দে ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।
আরও পড়ুন:
অসংখ্য জাতিগোষ্ঠী, শিল্পের রূপ এবং রাজনৈতিক কাঠামো এই দেশের একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য প্রকাশ করে।
কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে পরিচিত সাংস্কৃতিক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে, ভিলি পেরেক ফেটিশ, বেমবে মূর্তি যা অভিব্যক্তিতে পূর্ণ ; পুনু এবং কুয়েলের মুখোশ, কোটা রেলিকুয়ারি, টেকে ফেটিশ এবং স্মৃতিস্তম্ভ সমাধি সহ কবরস্থানগুলো এই বৈচিত্র্যের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
এ দেশের লারি জনগোষ্ঠীরও রয়েছে অনন্য নিদর্শন।
কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের যথেষ্ট উপনিবেশিক স্থাপত্য ঐতিহ্য রয়েছে। দেশটি এসব নিদর্শন সংরক্ষণ করেছে।
কঙ্গোর ব্রাজাভিলে বিভিন্ন পুরনো কীর্তি সংরক্ষিত করেছে, উদাহরণস্বরূপ হলো, সেন্ট অ্যান ডু কঙ্গোর ব্যাসিলিকা।
কঙ্গো প্রজাতন্ত্র দেশটি হচ্ছে মধ্য আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। দেশটি কঙ্গো ব্রাজাভিল, কঙ্গো রিপাবলিক বা কেবল কঙ্গো নামেও পরিচিত।
দেশটির পশ্চিমে গ্যাবন, উত্তর -পশ্চিমে ক্যামেরুন এবং উত্তর -পূর্বে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ পূর্বে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণে অ্যাঙ্গোলার ছিটমহল ক্যাবিন্দা এবং দক্ষিণ -পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত।
কঙ্গোর রাজধানী বসেছে ব্রাজাভিলে। ব্রাজাভিল শহরটি কঙ্গোর বৃহত্তম শহর। এটি কঙ্গো নদীর তীরে অবস্থিত। এই নদীর অপর তীরে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের রাজধানী কিনশাসা অবস্থিত।
গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র আফ্রিকা মহাদেশের একটি রাষ্ট্র। একসময় এটি জায়ার নামে পরিচিত ছিল। এ দেশের নীতিবাক্য হলো – ‘সুবিচার, শান্তি, কাজ’। দেশের সরকারি ভাষা -ফরাসি। স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা হলো – লিঙ্গালা, কঙ্গো, সোয়াহিলি, তাশিলুবা।
গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র দেশটির উত্তরে রয়েছে কেন্দ্রীয় আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র এবং দক্ষিণ সুদান। এর পূর্বে রয়েছে উগান্ডা, বুরুন্ডি এবং তানজানিয়া।
দক্ষিণ -পূর্বে রয়েছে জাম্বিয়া, দক্ষিণ -পশ্চিমে রয়েছে অ্যাঙ্গোলা। দেশটির পশ্চিমে রয়েছে সীমিত সমুদ্রসীমা।
এ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ হলো – কোবাল্ট, তামা, পেট্রোলিয়াম, ডায়মন্ড, সোনা, রূপা, জিংক, দস্তা, টিন, ইউরেনিয়া, কয়লা, নিয়োবিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ।
দেশটির একটি বৃহৎ অঞ্চল বিশ্ব বন্য প্রাণী তহবিলের মাধ্যমে মধ্য কঙ্গোর নিম্নভূমি বনকে পরিবেশগত অঞ্চল হিসাবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। বনভূমিটি পশ্চিমে পর্বতমালার দ্বারা বেষ্টিত। যা কি-না দক্ষিণ ও দক্ষিণ -পশ্চিমে মালভূমি সাভানায় সম্পূর্ণভাবে মিশে গেছে। এখানে উত্তরে কঙ্গো নদীর ওপারে রয়েছে ঘন তৃণভূমি। আর সেদিকে রয়েছে রুয়ানযোরি পর্বতমালা।
কিনশাসা গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ও সবচেয়ে বড় শহর। এটি কঙ্গো নদীর তীরে অবস্থিত। একসময় এই অঞ্চলটি গ্রাম ছিল। সেই সময়ের লোকজন মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। মাছ ধরার গ্রাম থেকে বর্তমানে একটি নগর অঞ্চলে গড়ে উঠেছে কিনশাসা। এ শহরটি কায়রো এবং লেগোসের পর আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম নগর এলাকা। কিনশাসার আরেক নাম ভিল দ্য কিনশাসা।