একদা জর্জিয়া ছিল মুসলমানদের দেশ


একদা জর্জিয়া মুসলমানদের অধীনে ছিল। ৬৫৪ খৃষ্টাব্দে ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান কর্তৃক প্রেরিত  একটি সেনাবাহিনী পূর্ব জর্জিয়া জয় করে এবং তিবিলিসিতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। লিখেছেন দুই বাংলার অন্যতম সেরা ভ্রমণ লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন

Table of Contents

বর্তমানে জর্জিয়ার জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ১০ ভাগ মুসলমান।

২০১১ খৃষ্টাব্দের জুলাই মাসে জর্জিয়ার সংসদ নতুন আইন পাস করে জর্জিয়ার সাথে ঐতিহাসিক সম্পর্ক যুক্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোকে নিবন্ধনের অনুমতি দেয়। আইনের খসড়ায় বিশেষভাবে ইসলাম এবং আরও চারটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করা হয়।

জর্জিয়ার মসজিদগুলি জর্জিয়ান মুসলিম বিভাগের তত্ত্বাবধানে কাজ করে, যা ২০১১ খৃষ্টাব্দের আগস্ট মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। ততদিন পর্যন্ত জর্জিয়ার মুসলমানদের বিষয় বিদেশ থেকে বাকু ভিত্তিক ককেশাস মুসলিম দ্বারা পরিচালিত হতো।

জর্জিয়ার উল্লেখযোগ্য জর্জিয়ান মুসলমানরা

হলেন – অঘসারতান – অঘসারতান হলেন জর্জিয়ার কাফেতির প্রথম বাদশাহ বা রাজা। তাঁর রাজত্বকাল ছিল ১০৫৪ থেকে ১০৮৪ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত।

আল্লাহভের্দি খান – তিনি ছিলেন ইরানি সাফাভিদ জেনারেল এবং জর্জিয়ান বংশোদ্ভূত রাষ্ট্র নায়ক। আল্লাহভের্দি খান প্রথমে খ্রিস্টান ছিলেন, পরে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

কোকা ইউসুফ পাশা – তিনি অটোমান সাম্রাজ্যের গ্র্যান্ড উজির ছিলেন। কোকা ইউসুফ পাশা পেলোপনেসের গভর্নর হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

ওমর আল শিশানী – তিনি জর্জিয়ান বংশোদ্ভূত আইএসআইএস কমান্ডার ছিলেন।

জেমাল তাবিজেজে – তিনি ছিলেন জর্জিয়ান ফুটবল খেলোয়াড়।

এই শহরের দর্শনীয় স্থান হল – ক্যাথেড্রালস সামিবা, সায়নি, ফ্রিডম স্কয়ার, রুস্তাভেলি অ্যাভিনিউ, নারিকালা দুর্গ, দ্যা সুডো মরিশ অপেরা থিয়েটার, জর্জিয়ান জাদুঘর, আগমশনেবিলি অ্যাভিনিউ।

তিবিলিসির আরেক নাম জর্জিয়া। ১৯৩৬ খৃষ্টাব্দের আগেই জর্জিয়া শহরটি আন্তর্জাতিক উপাধি টিফলিস বা তিবিলিসি নামে পরিচিত হয়। ৫ম শতাব্দীতে আইবেরিয়ার প্রথম ভাখতং একে প্রথম প্রতিষ্ঠিত করেন। আর তখন থেকেই তিবিলিসি বিভিন্ন জর্জিয়ান রাজ্য এবং প্রজাতন্ত্রের রাজধানী কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১৮০১ এবং ১৯১৭ খৃষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে রাশিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ তিবিলিসি ছিল দক্ষিণ এবং উত্তর ককেশাস এ দুটো এলাকা শাসন করার জন্য ইম্পেরিয়াল ভাইসরয়ের আসন।

তিবিলিসি রাজধানী শহরের আয়তন ৫০৪.২ বর্গকিলোমিটার। ইউরোপ এবং এশিয়া এর মধ্যবর্তী আড়াআড়ি পথে এর অবস্থান হওয়ার কারণে এবং সুবিধাজনক সিল্ক রোডের কাছাকাছি থাকার ফলে ইতিহাস জুড়ে তিবিলিস বিভিন্ন বৈশ্বিক শক্তির কাছে আলোচিত। এই শহরের অবস্থান আজ অবধি বিভিন্ন শক্তি এবং বাণিজ্যিক প্রকল্পের ট্রানজিট রুট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন: দুর্ধর্ষ মোঙ্গল সম্রাট চেঙ্গিস খান জন্মেছিলেন যে দেশে

তিবিলিসিতে যে সব স্থাপত্যকীর্তি রয়েছে তা মধ্যযুগীয়, নিওক্লাসিক্যাল, বিউক আর্টস, আর্ট নুভাউ, স্ট্যালিনিস্ট এবং আধুনিক কাঠামোর সংমিশ্রণ।

ঐতিহাসিক ভাবে, তিবিলিসি একাধিক সাংস্কৃতিক, নৃগোষ্ঠী এবং ধর্মীয় পটভূমির লোকদের বাসস্থান। যদিও বর্তমানে এর সিংহভাগই পূর্ব অর্থোডক্স খ্রিস্টান।

তিবিলিসি নামটি পুরাতন জর্জীয় ত’বিলিসি এবং পরবর্তী টিপলি শব্দ থেকে আসে। তি’বিলি বা তি’বিলিসি এর অর্থ হচ্ছে উষ্ণ জায়গা। শহরটিকে তিবিলিসি নামকরণ করা হয়েছিল কারণ এলাকাগুলোর অসংখ্য সালফিউরিক উষ্ণ প্রস্রবণগুলোর কারণে।

পূর্ব ইউরোপে জর্জিয়া দেশটি অবস্থিত। এ দেশটি কৃষ্ণ সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের মধ্যে রয়েছে। দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের সবচেয়ে পশ্চিমে এই জর্জিয়া দেশটি।

দক্ষিণ ককেশাসের অন্য রাষ্ট্রগুলি হল – আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া।

জর্জিয়ার রাজধানী বসেছে তিবিলিসিতে।

জর্জিয়ার সরকারি ভাষা জর্জীয়।

এ দেশে বসবাসকারীরা বিভিন্ন জাতির। যেমন – জর্জিয়ান, রুশ, আর্মেনীয়, আজারবাইজানীয়।

এ দেশের আয়তন মোট ৬৯,৪২০ বর্গকিলোমিটার।

জর্জিয়ার ভূমিরূপ বিচিত্র। এখানে রয়েছে উচ্চ পর্বতমালা এবং উর্বর উপকূলীয় নিম্নভূমি।

জর্জিয়ার উল্লেখযোগ্য শহরগুলো হলো – সোখুমি, জুগদিদি, ওজুগেঠি, বাঠুমি, আমব্রোলাউরি, কুঠাইসি, আখালছিখে, গোরি, এমছখেঠা, রুস্ঠাভি, ঠেলাডি, তিবিলিসি।

জর্জিয়া দেশের রাজধানী তিবিলিসি জর্জিয়ার সবচেয়ে বড় শহর। এ শহরটি কুরা নদীর তীরে অবস্থিত। এ শহরের জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ।

জর্জিয়ার জনসংখ্যার অধিকাংশই জর্জীয় জাতির লোক। ১৯২২ খৃষ্টাব্দে দেশটিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯১ খৃষ্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের পর দেশটিতে রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এইসব ঘটনার কারণে এবং অন্যান্য প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলির সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হবার ফলে জর্জিয়ার অর্থনীতিতে ধ্বস নামে। তবে ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে রাজনৈতিক সংঘাত কমে গেলে এবং মুক্ত বাজার সংস্কারগুলি প্রতিষ্ঠিত হলে দেশটির অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।