পৃথিবীতে রহস্যের শেষ নেই। মানুষের আড়ালে থাকা রহস্যগুলো একে একে উন্মোচিত হচ্ছে। এমনি একটি রহস্যময় হ্রদ হলো ভোস্টক। ভোস্টক হ্রদটি
অ্যান্টার্কটিকা মানুষের কাছে এক রহস্য। উত্তর আমেরিকার লেক ভোস্টক অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের মধ্যখানে অবস্থিত।
পৃথিবীর স্বাদু পানির বৃহত্তম লেকগুলোর মধ্যে লেক বা হ্রদ ভোস্টক অন্যতম। এটি শৈলশিরা দ্বারা দু’টি বেসিনে বিভক্ত। শৈলশিরার প্রায় প্রায় ৪০০ মিটার উপরিভাগ পর্যন্ত পানি আছে। তবে এখান থেকে পানি সংগ্রহ করা যায় না। এই লেকের নাম রাখা হয়েছে অ্যান্টার্কটিকার অভিযাত্রী ফাবিয়ান ডন বেলিংউসন হাজাজের নামানুসারে।
ঊনবিংশ শতাব্দির শেষে রুশ বিজ্ঞানী পি, এ, ক্রোপোকিন সর্বপ্রথম এন্টার্কটিকার বরফের আস্তরণের নিচে হ্রদের বা লেকের ধারণা দিয়েছিলেন। ক্রেয়পোকিনের ধারণার ভিত্তি ছিল চাপ। চাপের কারণে বরফের আস্তরণের নিচে তাপমাত্রা বেড়ে বরফ গলতে পারে। রুশ বিজ্ঞানী এ, পি, ক্যাপিটসা ভোস্টক ষ্টেশনের চারদিকে বরফের আস্তরণের গুরুত্ব পরীক্ষায় সিসমিক সার্ভে পরিচালনা করেন।
বিভিন্ন সময়ে ভোস্টক হ্রদ নিয়ে গবেষণা হয়েছে। গবেষণায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে লেমন্ড -ডোহার্টি আর্থ অবজারভেটরি।
এ হ্রদের পানি বিভিন্ন সময়ে বরফ হয়। উচ্চতাপের কারণে গলে পানিতে পরিণত হয়। প্রতি ১৩ হাজার ৩০০ বছর এ অবস্থার পরিবর্তন হয়। ১৯৭০ সালে এ বিষয়ে পূর্ণ ধারণা পাওয়া যায়। ১৯৯১ সালে ভোস্টক হ্রদের অবস্থান পুরোটাই নিশ্চিত হয়। ২০০৫ সালে লেকের মধ্যাংশে দ্বীপ আবিস্কৃত হয়।
পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ হ্রদ এই ভোস্টক হ্রদ।
পৃথিবীর দক্ষিণতম মহাদেশ এন্টার্কটিকা বা অ্যান্টার্কটিক। এন্টার্কটিকা সার্কেল প্রায় সম্পূর্ণ দক্ষিণে অবস্থিত এবং দক্ষিণ মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত, এটিতে ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু রয়েছে। অ্যান্টার্কটিকা হল পঞ্চমতম মহাদেশ, অস্ট্রেলিয়ার প্রায় দ্বিগুণ আয়তন এবং এর আয়তন মোট ১,৪২,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার। বা ৫৫,০০,০০০ বর্গমাইল।
অ্যান্টার্কটিকার বেশির ভাগ অংশই বরফ দ্বারা আবৃত, যার গড় পুরুত্ব ১.৯ কিমি।
অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে ঠান্ডা, শুষ্কতম এবং বায়ুপ্রবাহপূর্ণ এবং সর্বোচ্চ গড় উচ্চতা রয়েছে। এটি প্রধানত একটি মেরু মরুভূমি, যেখানে বার্ষিক ২০০ মিমি বা ৮ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয় উপকূল বরাবর। বিশ্বের প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ স্বাদু পানির রিজার্ভ সেখানে হিমায়িত রয়েছে, যা গলে গেলে বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬০ মিটার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর সর্বনিম্ন মাপা তাপমাত্রার রেকর্ড -৮৯.২ °সে বা -১২৮.৬°ফা। প্রাণীদের মধ্যে এখানে রয়েছে মাইট, নেমাটোড, পেঙ্গুইন, সীল এবং টার্ডিগ্রেড। আর গাছপালার মধ্যে এখানে রয়েছে টুন্দ্রা।
আরও পড়ুন: বাল্টিক সাগরের উপকূলে স্বর্গের দেশ ফিনল্যান্ড
অ্যান্টার্কটিকার মহাদেশীয় স্তুপ ১৮২০ খৃষ্টাব্দে প্রথম দেখা গিয়েছিল, যখন ফ্যাবিয়ান এবং মিখাইল লকজারেডের নেতৃত্বে রাশিয়ান অভিযান ফিম্বুল বরফের চর দেখেছিল। মহাদেশটি ১৮৪০ খৃষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুসন্ধান দ্বারা আবিস্কৃত হয়েছিল। সেই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লেফটেন্যান্ট চার্লস উইলকসের। ১৮৯৫ খৃষ্টাব্দে একটি নরওয়েজিয়ান দল প্রথম এখানে অবতরণ করেছিল।
অ্যান্টার্কটিকায় গ্রীষ্মের সময় ৫ হাজার লোক এখানের গবেষণা স্টেশনগুলিতে বসবাস করে। তবে শীতকালে এখানে ১ হাজারের বেশি লোক থাকে না।
বর্তমানে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশটির ইকোজোন সুরক্ষিত করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫ হাজার বিজ্ঞানী অ্যান্টার্কটিকায় বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন।
অ্যান্টার্কটিকায় সামরিক কর্মকাণ্ড এবং খনিজ সম্পদ খনন নিষিদ্ধ।