ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও পেরু ভ্রমনে যেসব স্থান ঘুরে দেখবেন


দক্ষিণ আমেরিকার তিন দেশ আর্জেন্টিনা, পেরু আর ব্রাজিল ঘুরে দেখতে পারেন। আকাশপথে ঢাকা থেকে প্রথমে দুবাই। সময় লাগবে ৫ ঘন্টা। দুবাই থেকে বিমান বদল করে ব্রাজিলের সাওপাওলো যাবেন। দীর্ঘ বিমানযাত্রা। সময় লাগবে প্রায় ১৮ ঘন্টা।

দ্বিতীয় দিন পৌঁছে বিমানযাত্রার ক্লান্তি দূর করতে সাওপাওলোতে হোটেলে বিশ্রাম নিন। তৃতীয় দিন সকালে সাওপাওলো থেকে চলে আসবেন পেরুর রাজধানী লিমায়।

সারাদিন পেরু দেশের রাজধানী শহর ঘুরে দেখুন। এখানের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হল সপ্তদশ শতাব্দীর স্থাপত্যের নিদর্শনগুলো। পুরনো আমলের সিটি অফ কিংস -এ রকম বহু নিদর্শন আছে। পরদিন লিমা থেকে কুজকো যাত্রা করুন।

পথে দেখে নিবেন সিক্রেট ভ্যালিতে ইনকাদের শহর। এখানকার পিসাক মার্কেটে স্থানীয় শিল্পীদের হস্তশিল্পের পসরাও অবশ্যই দেখবেন। লাঞ্চ করবেন উরুবাম্বা নামক উপত্যকা শহরে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বড়ই নয়নাভিরাম। নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে দেখতেই কুজকো পৌঁছে যাবেন। রাতে সেখানেই বিশ্রাম নিন।

পরদিন অর্থাৎ পঞ্চম দিন মাচুপিচু যাত্রা করুন। মাচুপিচুতে ইনকা সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ দেখতে গোটা দিনই লেগে যাবে। ট্রেনেই লাঞ্চ করবেন। সারাদিন ঘুরেফিরে দেখার পর ট্রেনেই কুজকো ফিরবেন। পরদিন ফের ট্রেন যাত্রা করুন টিটিকাকা হ্রদ দেখবার জন্য। টিটিকাকার কাছে পুনো শহরে পৌঁছে হোটেলে চেক -ইন করুন। নিজের মতো বৃহদায়তন লেকের আশেপাশে ঘুরে বেড়িয়ে দিন কাটান। সপ্তমদিন টিটিকাকা লেকে এক্সকারশন করুন। দেখবেন লেকটাউন বা উরোস আইল্যান্ড, চাকিল আইল্যান্ড ইত্যাদি। এখানকার আদিবাসীদের জলের ধারের জীবনযাপন ও তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়ও হবে। রাতে থাকবেন পুনোতেই।

অষ্টম দিন পুনো থেকে বিমানযোগে লিমা এসে বিমান বদল করে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেস পৌঁছবেন। সেদিনটা বিশ্রামে থাকুন। পরদিন সারাদিন শহর ঘুরে দেখুন। রাতে ট্যাঙ্গো শো দেখুন।

দশমদিনে আর্জেন্টিনার আদিবাসীদের গটচোয়া সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করতে যাবেন শহরের উপকন্ঠে আদিবাসী বসতি এলাকায়।

একাদশ দিনে বুয়েন্স আইরেস থেকে বিমানে চলে যাবেন ব্রাজিলের ইন্ডয়াজাতে। পাহাড় ঘেরা ইন্ডায়াজার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঝরণা, জলপ্রপাত, অরণ্য ইত্যাদি দেখেই দিন কেটে যাবে।

দ্বাদশ দিনে বিমানে ইন্ডয়াজা থেকেই চলে যাবেন রিও ডি জেনিরোতে। পৌঁছাতে দুপুর হয়ে যাবে। বাকিদিনটা শহর ঘুরে দেখুন। সন্ধ্যায় ব্রাজিলের বিখ্যাত সাম্বা নাচ দেখে নিন। আপনি যদি রসিক হন তাহলে ওদের সঙ্গে নাচতে পারেন। পরদিনও রিও ডি জেনিরো সাইট দেখে নিন। সারাদিনের ট্যুরে দেখবেন বিশ্বখ্যাত যিশু খ্রিস্টের স্ট্যাচু, তিজুকা ফরেস্ট, মারকানা স্টেডিয়াম, কোপা কা বানা সমুদ্র সৈকত ইত্যাদি।

চতুর্দশ দিনে আমাজনের জঙ্গলে যাত্রা করুন। মানাউস পৌঁছে হোটেলে বিশ্রাম নিন। পরের দিন  আমাজনের অ্যালিগেটর পার্ক দেখতে যাবেন। সেই সুযোগে আমাজন নদী দেখে জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করুন। দেখতে ভুলে যাবেন না কিন্তু আমাজনের আদিবাসীদের আর তাদের জীবনযাত্রার দৃশ্য।

ষোড়শদিনে সকালে চলুন মাঙ্কি জঙ্গলে। লাঞ্চের পর সাওপাওলোতে ফিরে আসুন। বাকি দিনটা সাওপাওলো শহর ঘুরেফিরে কাটাবেন।

ব্রাজিল সম্পর্কে যা জানবেন – বিশ্বকাপকে ঘিরে ফুটবল মাঠের বাইরেও অনেক কিছু নিয়ে মাতামাতি হয় ব্রাজিলে। ফুটবল মাঠে প্রিয় দলকে উৎসাহ দিতে অনেকেই তাদের দেশিয় পোশাক পরে গ্যালারিতে যান। এছাড়াও নিজেদের ঐতিহ্যবাহী বাঁশী, টুপি এসব নিয়েও হরহামেশাই দর্শকদের দেখা যায়। বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিলের দাপট রয়েছে। সে কারণে দর্শক সংখ্যাও তাদের নেহাত কম নয়। আর এদেরই একটা বড় অংশকে হয়তো হলুদ -নীল জার্সি ছাড়াও অন্যান্য পোশাকে গ্যালারিতে দেখা যায়।

ব্রাজিল-সাও_পাওলো

ব্রাজিল দেশটির পোশাক আশাকে ইউরোপীয় ছাপও রয়েছে যথেষ্ট। কারণ দীর্ঘদিন পর্তুগিজদের ঔপনিবেশিক ছিল ব্রাজিল। পর্তুগিজদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যেও লেস আকৃতির এক ধরনের ফেব্রিক খুব জনপ্রিয় ওখানে। যাকে বলা হয় বোরদাদো রিচেলিউ।

ব্রাজিলের মহিলাদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় পোশাক হচ্ছে ক্যারমেন মিরান্ডা। লম্বা ফ্রক আর গাউনের মিশেলে এ ধরনের পোশাকে অনেক রং থাকে। সঙ্গে পাগড়ির মতো লম্বা স্কার্ফ পেঁচানো থাকে মাথায়। আর গলায় নেকলেস হাতে ব্রেসলেটসহ অন্যান্য গয়না তো রয়েছেই।

ব্রাজিলের সাওপাওলোর উপকূলে রয়েছে এক ভয়ংকর দ্বীপ। এই দ্বীপে এমন সব ভয়ংকর সাপের বাস যে ব্রাজিল সরকার বাধ্য হয়ে দ্বীপটিতে সাধারণ মানুষের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। কারণ, দ্বীপটিতে যাবেন তো ঠিকই জীবন নিয়ে তবে ফেরার নিশ্চয়তা নেই। চূড়ান্ত রকমের ভয়ংকর এই দ্বীপটির নাম ইহা ডি কুইমাডা গ্র্যান্ডি। দ্বীপটিতে যে শুধু পৃথিবীর বিষধর সাপগুলোর প্রায় হাজার পাঁচেকের মতো বাস তাই নয়। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপ গোল্ডেন ল্যান্সহেডেরও বাস এই দ্বীপটিতেই। গোল্ডেন ল্যান্সহেডকে এ দ্বীপটি ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না। এই দ্বীপটির আয়তন ৪৩০ বর্গমিটার। দ্বীপটিতে ভ্রমণে ব্রাজিল সরকারের নিষেধাজ্ঞা তো রয়েছেই, মানুষ এমনিতেই পারতপক্ষে কুইমাডা গ্র্যান্ডিমুখী হয় না। তবে ওই দ্বীপের ভয়ংকর সাপগুলো নিয়ে গবেষণা করেন এমন কিছু বিজ্ঞানীর  দ্বীপটিতে ভ্রমণের অনুমতি রয়েছে। এছাড়া ব্রাজিলীয় নৌবাহিনীর সদস্যদেরও দ্বীপটিতে যেতে হয় প্রায়ই।

আরও পড়ুন: হুগলীর তীরে প্রিয় শহর কলকাতায়

ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সংযোগ স্থলে পৃথিবীর পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর ইগুয়াচ্ছু জলপ্রপাত। উত্তরে ব্রাজিল, দক্ষিণে আর্জেন্টিনা আর পশ্চিমে প্যারাগুয়ে এই তিন দেশকে ছুঁয়েছে দু’টি প্রধান নদী। একটির নাম ইগুয়াচ্ছু, আরেকটির নাম পারানা। এই দুই নদীর সঙ্গমের বাইশ কিলোমিটার আগে সৃষ্টি হয়েছে এই অনিন্দ্য সুন্দর জলপ্রপাত। ইগুয়াচ্ছুকে দেখে অনেকেই জলপ্রপাত বলেন না, বলেন জলপ্রপাতমালা। ইগুয়াচ্ছু নদী পারানা নদীর সঙ্গে মিলিত হবার আগে বহু শাখা -প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে সৃষ্টি করেছে ২৭৫টি জলপ্রপাত।

কেনাকাটাও করে নিতে পারেন, কারণ বেড়ানো এখানেই শেষ।

পরের দিন সাওপাওলো থেকে দুবাইগামী বিমান ধরবেন। দুবাই হয়ে ঢাকা ফিরে আসবেন।

ভ্রমণ নিয়ে আরও পড়ুন: ইংল্যান্ডের লেক ডিস্ট্রিক্টের অপরূপ নিসর্গে এক ভারতীয় দম্পতি