বলিভিয়া পৃথিবীর অন্যতম সৌন্দর্যময় দেশ। ল্যাটিন আমেরিকার এই দেশটিতে আছে মনোরম নৈসর্গিক শোভা। বলিভিয়া নিয়ে লিখেছেন দুই বাংলার অন্যতম সেরা ভ্রমণ লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন।
Table of Contents
- পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ হল বলিভিয়া।
- বলিভিয়ার রাজধানী বসেছে সুক্রেতে। তবে এ দেশের বৃহত্তম নগরী সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরা।
- বলিভিয়া দেশটির আয়তন ১০,৯৮,৫৮১ বর্গকিলোমিটার।
- ইয়ানগাস রোডটি দেখে যে কোনো ট্যুরিস্ট ভয়ে অস্থির হয়ে ওঠেন।
- বলিভিয়ার উল্লেখযোগ্য স্থান হল – লাপাজ, সান্টা আনা, রিবেবাল্টা, ওরুরো, তারিজা ইত্যাদি। এ দেশের মানুষ রোমান ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী। দেশের ভাষা – স্পেনিস, কুইচুয়া।
পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ হল বলিভিয়া।
এখানের অধিকাংশ শহরগুলো পাহাড়ের গায়ে গায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। প্রকৃতির আশীর্বাদপুষ্ট অপরূপ সৌন্দর্যের দেশে যিনি একবার যান তিনিই অনুশোচনা করে বলেন, জন্ম কেন হলো না বলিভিয়ায়! জন্ম হত যদি বলিভিয়ায় তবে এ জীবন স্বার্থকতা খুঁজে পেত। পরজনমে যেন আমার জন্ম হয় এই দেশেতে।
দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যভাগে অবস্থিত বলিভিয়া দেশটি। আন্দেস পর্বতমালার অনেক উঁচুতে থাকার কারণে বলিভিয়া দেশটিকে পৃথিবীর ছাদ নামেও ডাকা হয়। বলিভিয়াতে রয়েছে বরফাবৃত বহু পর্বতশৃঙ্গ – আর এই দেশটির উন্মুক্ত মালভূমির উপর দিয়ে বয়ে যায় ঠান্ডা বাতাস। পর্বতমালার পূর্বে রয়েছে সবুজ তৃণভূমি আর ক্রান্তীয় বনাঞ্চল।
বলিভিয়ার রাজধানী বসেছে সুক্রেতে। তবে এ দেশের বৃহত্তম নগরী সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরা।
বলিভিয়া দেশটির আয়তন ১০,৯৮,৫৮১ বর্গকিলোমিটার।
এ দেশটির অধিকাংশ পর্যটন স্থান প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। যে জন্য পৃথিবীর বহু দেশ থেকে দলে দলে ট্যুরিস্ট বলিভিয়া আসেন ভ্রমণ করার জন্য। ভ্রমণ শেষে অনেকেই বলেন, বলিভিয়া হল পৃথিবীর অন্যতম এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ।
![বলিভিয়া : দক্ষিণ আমেরিকার নান্দনিক সৌন্দর্যের দেশ 2 বলিভিয়া](https://sagorpar.com/wp-content/uploads/bolivia-1756155_1280-min.webp)
বলিডিয়ার উল্লেখযোগ্য শহর হলো লা পাজ। এ শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে তিন হাজার মিটারেরও বেশি উঁচুতে আন্দেসের আলটিপ্লেনো মালভূমিতে অবস্থিত। উঁচুভূমিতে রয়েছে এর পাশাপাশি এল আল্টো শহরটিও , যার সাথে বরফের আচ্ছাদন রয়েছে। বলা যায়, একটি খাড়া উপত্যকায় এ শহরটি, যা এখানকার অধিবাসীদেরকে আলটিপ্লানোর কঠোর উপাদানগুলি থেকে রক্ষা করে।
লা পাজ একটি খাঁটি ইট ঘর এবং লম্বা আকাশচুম্বী চিত্রগুলি পটভূমিতে একটি নাটকীয় পর্বতমালার প্রাকৃতিক দৃশ্যের সামনে একে অপরের শীর্ষে নির্মিত বলে একটি আকর্ষণীয় নগরীর দৃশ্যধারণ করেছে। এই শহরে দেখা যাবে রাষ্ট্রপতি প্রাসাদ, পুরোনো কলোনিয়াল ভবন, ডাইনের বাজার।
লা পাজ শহরের আরেক ঐতিহ্য হল, এই শহরটি আন্ডিয়ান সংগীত এবং নৃত্যের জন্য বিখ্যাত স্থান। প্রায়শই এখানে অনুষ্ঠিত হয় আন্ডিয়ান সংগীত ও নৃত্য। লা পাজ হল বলিভিয়ার তৃতীয় জনবহুল শহর। কুকুয়াইপু নদী হতে উৎপন্ন টিটিকাকা হ্রদ থেকে ৬৮ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। শহরটি চিলি ও পেরুর বিভিন্ন সমুদ্র বন্দরগুলোর সাথে রেলপথ ও সমুদ্রপথে যুক্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন: মায়া সভ্যতার পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের দেশ
লা পাজ শহর থেকে বলিভিয়ার বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করা অনেকটাই সুবিধাজনক।
মাদিদি ন্যাশনাল পার্ক উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। মাদিদি ন্যাশনাল পার্কটি আন্দিজ পর্বতমালা হতে আমাজন পর্যন্ত বিস্তৃত। পৃথিবীর প্রায় ৯,০০০ প্রজাতির পাখির মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশ এই পার্কের বনে রয়েছে। বানরের একটি প্রজাতির টিটি মাংকির জন্যেও বেশ বিখ্যাত।
ইয়ানগাস রোডটি দেখে যে কোনো ট্যুরিস্ট ভয়ে অস্থির হয়ে ওঠেন।
লা পাজ থেকে বলিভিয়ার আমাজন রেইনফরেস্ট অঞ্চল পর্যন্ত যাওয়ার পথটিকে বলা হয়, বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ সড়কগুলোর একটি। লা পাজ শহর থেকে করোয়কো শহরে পৌঁছানোর আগে প্রথমে ১৫ হাজার ফুট খাড়া উপরে উঠে যেতে হয়। তারপর আবার ৪ হাজার ফুট নিচে নেমে আসতে হয়।
![বলিভিয়া : দক্ষিণ আমেরিকার নান্দনিক সৌন্দর্যের দেশ 3 বলিভিয়া](https://sagorpar.com/wp-content/uploads/bolivia-2543157_1280-min.webp)
বলিভিয়ার কর্ডিলেরা রিয়ালের সর্বোচ্চ পর্বতের উপর ইলিমনি শহরটি অবস্থিত। এটি পড়েছে বলিভিয়ার পশ্চিমে। ইলিমনি শহরটির পূর্বপ্রান্তে এল অল্টো এবং লা পাজ শহরের কাছে অবস্থিত। ইলিমনি শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪,৫৭০ মিটার উঁচুতে।
তিওয়ানাকু পশ্চিম বলিভিয়ার একটি প্রাক কলম্বিয়ার প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট যা টিটিকাকা লেকের নিকটে – এটি দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম হ্রদ। এ হ্রদটির দক্ষিণ -পূর্বাঞ্চলীয় উপকূল জুড়ে রয়েছে তিওয়ানাকু নামে একটি প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষ। বলা হয়, এ জায়গাটি জুড়ে একদা ছিল প্রাচীন ইনকা সভ্যতা।
সালার ডি ইউনি বলিভিয়ার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। যা কিনা এক অপরূপ রূপে সেজে আছে। যা বারে বারে দেখেও দেখার আকাঙ্খা তো মেটে না। হাজার হাজার বছর আগে এই সালার ডি ইউনি অঞ্চলে বিশাল এক হ্রদ ছিল, যার নাম ‘লেক মিনচিন’। কিন্তু মরু অঞ্চলীয় খরার কারণে ধীরে ধীরে এ হ্রদ শুকিয়ে গিয়ে রূপ নিল বিশাল এক মরুভূমি রূপে।
যার উপরের আবরণে রয়েছে লবণ আর লবণ। আর এর মধ্যভাগে জমা হল লিথিয়াম। অনেকেই বলেন, পৃথিবীর ৬০ – ৭০ ভাগ লিথিয়ামের মজুদ রয়েছে এই অঞ্চলে। সালার ডি ইউনির সল্ট ফ্লেট দেখার জন্য যেতে হয় রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে।