উপমহাদেশের মুসলিম স্থাপত্যের উজ্জ্বল নিদর্শন কুতুব মিনার


নাটক: অপরাধ (ভারতীয় উপমহাদেশের সম-সাময়িক অপরাধ প্রবণতার একটি নাট্যরূপ)

দৃশ্য -এক

দিল্লিতে বেড়াতে আসে সজীব, দীপক ও সজল।

এক রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া -দাওয়া করছে।

পাশের টেবিলে দুই ভদ্রলোকের কথপোকথন।

১ম ভদ্রলোক – ভাইসাব, শুনেছেন নাকি এবার কুতুব মিনারের নাম বদলে ‘বিষ্ণু স্তম্ভ’ করার দাবি তুলল কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইউনাইটেড হিন্দু ফ্রন্ট এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠন মহাকাল মানবসেবা প্রটেস্ট। গতকাল এরা কুতুব মিনারের সামনে এসে চিৎকার করে হনুমান চালিশা পাঠ করেছে।

২য় ভদ্রলোক – এই ঘটনায় পুলিশ অবশ্য ডজনখানেক লোককে গ্রেফতার করেছে। হিন্দু সংগঠন যে জলঘোলা করার চেষ্টা করবে সে -খবর পুলিশের কাছে ছিল। তারপরও কট্টর হিন্দু সংগঠনের কর্মীরা প্লেকার্ড হাতে স্লোগান দেয়, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে, মানতে হবে – কুতুব মিনারের নাম বদলে বিষ্ণু স্তম্ভ করা হোক’।

১ম ভদ্রলোক – বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে কুতুব মিনারকে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্গত কুতুব মিনার।

অপরাধ: সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহের নাট্যকথন

সজল, দীপক ও সজীব খেয়েদেয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে আসে।

দীপক – কুতুব মিনারকে ঘিরে বিতর্ক হয়েছে আগেও। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, কুতুব মিনার আদতে একটি ‘বিষ্ণু স্তম্ভ’। একসঙ্গে এই চত্বরে ২৭টি জৈন ও হিন্দু মন্দির ভেঙে এই মিনারটি নির্মাণ করা হয়েছিল বলে তাদের দাবি। কুতুব মিনার চত্বরে কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদকে তারা মন্দির বলে ঘোষণার দাবিতে বহুদিন ধরেই জলঘোলা করার চেষ্টা করছে।

সজল – ব্রিটিশ শাসনামলে এদের এ দাবি কোথায় ছিল? হঠাৎ করে নাম পরিবর্তনের জলঘোলা সৃষ্টি না করে এই সংগঠনগুলি কি বিশাল ভারতের লক্ষ লক্ষ বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের জন্য দাবি তুলতে পারে না? তা পারবে না? তারা কি পারে না দুর্নীতিবাজ, খুনী, ধর্ষক, মজুতদার, ভেজালবাজদের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে? পারে না।

কবে কোন জন্মে কোনটা কি ছিল, তা নিয়ে অযথা জলঘোলা করছে কেন ওরা ? কামের কামে অকাম, বেকামে লাফায়।

সজীব – উপমহাদেশের মুসলিম স্থাপত্যের উজ্জ্বল নিদর্শন কুতুব মিনার। ব্রিটিশ আমলের কয়েকজন ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক এটিকে কুতুব মিনার নামে আখ্যা দেন। তাঁদের মধ্যে কানিংহাম, উলসলিহেগ, এন আর মুন্সি অন্যতম। তাঁরা একমত পোষণ করে লেখেন যে, কুতুব উদ্দিন আইবক বাগদাদের সুফিসাধক কুতুব উদ্দিন বখতিয়ার কাকির নামানুসারে এই মিনারকে ‘কুতুব মিনার’ নাম দেন। অনিন্দ্য সুন্দর এই মিনারের শিলালিপিতে লেখা রয়েছে, ‘সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ছায়া পূর্ব থেকে পশ্চিমে ফেলার জন্যই এ মিনার নির্মাণ করা হয়’।

 

দীপক – শুধু কি তাই? মুসলিম ঐতিহ্যবাহী সবকিছুকে ধ্বংস করে ফেলার নেশায় এরা উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন বিভিন্ন শহর ও স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে। তারপর থেকে সুযোগ পেলেই কট্টরপন্থীরা মুসলিম স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলির নাম পরিবর্তন করার দাবি তোলেন।

সজীব – সেই ধারায় এবার যোগ হল দিল্লিতে।  তুঘলক রোড, আকবর রোড, আওরঙ্গজেব লেন, হুমায়ুন রোড ও শাহজাহান রোডের নাম পাল্টে দেওয়ার দাবি। কট্টরপন্থী হিন্দুরা এগুলিকে ‘মুসলিম দাসত্বের প্রতীক’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে এই রাস্তাগুলির নাম পরিবর্তনের ডাকও দিয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের দাবি, তুঘলক রোডের নাম – গুরু গোবিন্দ সিং মার্গ ;

আকবর রোডের নাম – মহারানা প্রতাপ রোড ; আওরঙ্গজেব লেনের নাম আবদুল কালাম লেন ; হুমায়ুন রোডের নাম মহর্ষি বাল্মীকি রোড এবং শাহজাহান রোডের নাম জেনারেল বিপিন রাওয়াতের নামে করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

দীপক – যাদের নেই কোন কামকাজ, বাপের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়, তারাই করে নাম পরিবর্তনের ফালতু দাবি। ইতিমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ঐতিহ্যবিজড়িত স্থানগুলির নাম পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে বারবার দেশে এবং দেশের বাইরে বিতর্কিত হয়েছে।

সজীব – এটা মুসলিম ইতিহাস মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। ইতিহাস মুছে ফেলার জন্য পরবর্তী প্রজন্ম কি এদেরকে ক্ষমা করবে? নিশ্চয়ই করবে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে যেমন ইরাক, ইরান, আরব, তুরস্ক হতে দলে দলে সুফি সাধক ভারতবর্ষে এসে বসতি স্থাপন করেছে, ব্রিটিশরাও এসেছে। তাদের অধিকাংশরাই ভারতবর্ষের নারীদেরকে কখনও বিয়ে করেছে আবার কখনও বিয়ে না করে সন্তান জন্ম দিয়ে চলে গেছে। আমরা যে বিভিন্ন জাতির সংমিশ্রণে জন্মলাভ করেছি, কট্টরপন্থীদেরও রক্তে যে বিভিন্ন জাতির মিশ্রণ রয়েছে – তা পরিবর্তন করবে কি ভাবে তারা ?

দীপক – এবার আমরা ঝাঁসির দিকে গেলে কেমন হয়? ফের গণধর্ষণের পর তরুণী বিক্রি উত্তরপ্রদেশে।

সজল – বিক্রি বিষয়টা তো ইন্টারেস্টিং।

দীপক – নিজের বিয়ের কার্ড নিয়ে নেমন্তন্ন করতে বেরনো তরুণীকে অপহরণ করে গণধর্ষণের পর তাকে বিক্রি করে দেওয়া হল এক স্থানীয় নেতার কাছে।

সজল – নেতার কাছে বিক্রি, এ কোন যুগ? রাজনৈতিক দলের নেতা ধর্ষিতা তরুণীকে কিনে দিনের পর দিন ধর্ষণ চালিয়ে যাবে, আর এ জন্যই তো তরুণীকে ক্রয় করেছেন। তাহলে এই ধরনের রাজনৈতিক নেতা তো ধর্ষণের স্কুল খুলে বসেছেন, এই ইঙ্গিত কি দেয় না?

দীপক ( হাসতে হাসতে)  – রাজনৈতিক নেতা ধর্ষিতা তরুণীকে ক্রয় করে …. এ কোন যুগে এলাম গো। তরুণী বেচাকেনা শুরু হলে মহিলাদের জীবনের নিরাপত্তা থাকল কোথায়?

সজীব – ১৮ বছরের ওই নির্যাতিতার বয়ান অনুযায়ী, সে বিয়ের তিন দিন আগে বিয়ের কার্ড বিলি করতে বেরিয়েছিল। হঠাৎই তিনজন তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে। এরপর তারা তাঁকে এক রাজনীতিবিদের কাছে নিয়ে যায়। সেখানেই তাকে বিক্রি বিক্রি করা হয়। সেই রাজনীতিবিদ আরও কয়েকদিন নির্যাতিতাকে ঝাঁসিতেই বিভিন্ন জায়গায় স্থান বদলে লুকিয়ে রাখেন এবং ধর্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকেন। রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে পাতিনেতারা ওই তরুণীটিকে ক্রয় করার পর  মধ্যপ্রদেশের দাতিয়া জেলায় নিয়ে যায় তারা । সেখানে আরও কয়েকদিন ধরে ওই তরুণীটি জোর করে থাকতে বাধ্য করে এবং ধর্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। দাতিয়ায় থাকার সময়েই একদিন তরুণীটি লুকিয়ে বাবাকে ফোন করে গোটা ঘটনাটি জানান। এরপরই ওই তরুণীর বাবা পুলিশের সাহায্যে তাকে উদ্ধার করে আনেন।

দীপক – নারী কেনাবেচার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের নেতারা জড়িত, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ফের কালি লাগল যোগী সরকারের বিরুদ্ধে। ফের ক্ষমতায় এসে নারী সুরক্ষার বিষয়ে তিনি কতটা উদাসীন তা উত্তরপ্রদেশে পরপর ধর্ষণের ঘটনা থেকেই প্রমাণ বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।

সজীব – সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলেছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপহরণ, ধর্ষণ ও বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।

দীপক – দিন দশেক আগেই উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুর ও উন্নাওয়ে গণধর্ষণের শিকার হন বছর তিরিশের এক মহিলা ও এক নার্স। শাহজানপুরের অভিযুক্ত পাঁচ জন ধর্ষণের ভিডিও রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে। অন্যদিকে উন্নাওয়ের এক গ্রামের হাসপাতালে কাজে যোগ দেওয়ার দিনেই গণধর্ষণের শিকার হন এক নার্স। তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয় হাসপাতালের ছাদের পাশ থেকে।

সজল – একের পর এক ধর্ষণ, শুনতে শুনতে উপমহাদেশের লোকজন অস্থির হয়ে পড়েছে। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কি কাঁদবে?

 

দৃশ্য -দুই

স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ চিল্কা বাবা’র।

পুলিশ তাকে বেঁধে নিয়ে গাড়িতে উঠাল।

সজল, সজীব ও দীপক সেখানে এসে দাঁড়ায়।

একজন দর্শক – আসরাম বাপু, ডেরা সাচা রাম রহিম গুরমিত সিংহের পর আরও এক বাবার কান্ডকারখানা প্রকাশ্যে এল। ধর্ষণের অভিযুক্ত এই বাবার নাম চিল্কা বাবা।

সজল – ঘটনাটা কি?

Oporadh

দর্শক – শুনলাম, সন্তান না হওয়ায় স্বঘোষিত বাবার শরণাপন্ন হয়েছিলেন এক দম্পতি। সন্তান প্রাপ্তির জন্য পুজো এবং যজ্ঞ করার পরামর্শ দেন চিল্লা বাবা। সেই মতো ওই দম্পতিকে নিজের বাড়িতে আসতে বলেন তিনি। চিল্কা বাবার পরামর্শ মতো পুজোর সমস্ত উপকরণ নিয়ে তাঁর বাড়িতে হাজির হন দম্পতি। এরপর চিল্কা বাবা দম্পতিকে দু’টি ফুল দেন এবং সেই ফুল শুঁকতে বলেন। বাবার প্রতি অগাধ বিশ্বাস নিয়েই সেই ফুল শোঁকেন ওই দম্পতি। আর শুঁকতেই জ্ঞান হারান দু’জনে।

আরেকজন দর্শক – এর পরই চিল্কা বাবা মহিলার স্বামীর হাত -পা বেঁধে ফেলেন। তারপর মহিলাকে একটি ঘরে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে ধর্ষণ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে মহিলার স্বামীর জ্ঞান ফিরতেই চিল্কা বাবাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। কিন্তু কোনওক্রমে বিহার রাজ্যের মাধেপুর জেলার আলমনগর থেকে চিল্কা বাবা পালিয়ে যায়। অনেক দিন ধরে পলাতক থাকার পর আজ সে ধরা পড়ল।

সজল – ধর্ষণের ঘটনার অভাব নেই। ৭৯ দিন ধরে ধর্ষণ, উড়িষ্যায় গ্রেফতার তান্ত্রিক। আড়াই বছরের শিশুর সামনে ৭৯ দিন ধরে এক মহিলাকে লাগাতার ধর্ষণ করেছে তান্ত্রিক।

দীপক – ঘটনাটা উড়িষ্যার কোন এলাকার?

সজল – উড়িষ্যার বালাশোর এলাকার।

দীপক ( হাসতে হাসতে) – তান্ত্রিক বাবা আর কি কি করল?

সজল – ওই মহিলাকে বিয়ের পর থেকে তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচারের শিকার হতে হচ্ছিল। পণের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তান্ত্রিক তাঁর শাশুড়ি ও স্বামীকে বলেছিল সে সব ঠিক করে দেবে। আর কোনও ঝামেলা থাকবে না। এরপর শ্বাশুড়ি পুত্রবধূকে বলে, তান্ত্রিকের ঘরে যেতে। পুত্রবধূ একেবারেই রাজি হয়নি। শেষপর্যন্ত তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয় শ্বাশুড়ি। ওষুধ খেয়ে মহিলা চেতনা হারায় আর তার ফায়দা নেয় ওই তান্ত্রিক। ৭৯ দিন ধরে সে ধর্ষণ করে মহিলাকে। বদ্ধ ঘরে ওই তান্ত্রিক মহিলার জন্য খাবার চেয়ে পাঠাত।

দীপক – খবরটা জানাজানি হল কি ভাবে?

সজল – একদিন তান্ত্রিক তার মোবাইল ফেলে বাইরে  যায়। সেই মোবাইল থেকেই মহিলা তার বাপের বাড়িতে ফোন করে। তারা গোটা ব্যাপারটি জানায় পুলিশকে। তারপর তালা ভেঙে মহিলাকে উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ আসার আগেই ওই তান্ত্রিক চম্পট দেয়।

 

দীপক – ধর্ষণ ঘটনার কি আর অভাব আছে? ধর্ষণে কিলবিল করছে চারদিক। খোদ নাতনিকে শ্লীলতাহানির দায়ে ধৃত হয়েছে দাদু। কালনার নাদানঘাট থানার পুলিশ শারীরিক প্রতিবন্ধী ওই নাবালিকাকে ধর্ষণের দায়ে মেয়েটির দাদুকে গ্রেফতার করে পূর্বস্থলি থানার বড় কোবলা থেকে। দাদুর নাম বিশ্বেশ্বর দেবনাথ।

সজল – বয়স কত রে তার?

দীপক – ৭১ কি ৭২ বছর। ইতিমধ্যে তাকে কোর্টে তোলাও হয়।

সজীব – মাটিয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে ধৃত মেসোমশাই।

দীপক – কি বলিস রে।

সজীব – উত্তর চব্বিশ পরগণার বসিরহাট মহকুমার চৈতা গ্রামপঞ্চায়েতের জগতপুর গ্রামে শ্যালিকার ১৫ বছরের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে ৩৭ বছরের জাফর মন্ডলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই শ্যালিকা নিজের পরিবার নিয়ে জামাইবাবুর বাড়িতেই থাকত। সেই সুযোগে শ্যালিকার মেয়েকে জাফর একাধিকবার ধর্ষণ করে।

 

দৃশ্য – তিন

কুচবিহারে বেড়াতে আসে সজীব, সজল ও দীপক।

এক রেঁস্তোরায় বসে খাওয়াদাওয়া করছে ওরা।

পাশের চেয়ারে বসা দুই তরুণের মধ্যে কথপোকথন।

১ম যুবক  – একের পর এক ধর্ষণকান্ড চলছে রাজ্য জুড়ে। এবার নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগ উঠল কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমা এলাকায়। এই ঘটনার চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে গোটা এলাকায়। অভিযুক্ত যুবক এবং আরও কয়েকজন নাবালিকাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে বলে পরিবারের অভিযোগ।

২য় যুবক  – কি ভাবে কোথায় ঘটনা ঘটেছিল?

১ম যুবক – ওই নাবালিকার পরিবার বিহারের পূর্ণিয়ায় ইটভাটায় কাজের জন্য গিয়েছিল, সেখানে ওই নাবালিকার সাথে পরিচয় হয় তুফানগঞ্জেরই নাককাটিগছ এলাকার এক যুবকের। বিহারের পূর্ণিয়াতেই ওই দু’জনের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক তৈরি হয় এবং দু’জনে অন্য ইটভাটায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

২য় যুবক – তাহলে তো প্রেমের সম্পর্ক।

১ম যুবক – আরে না। এই ঘটনার পর সেখানে থাকেনি নাবালিকার পরিবার। সেখান থেকে মেয়েকে নিয়ে তারা বাড়িতে ফিরে আসে। এরপর ওই অভিযুক্ত যুবক আরও কয়েকজন যুবককে সাথে নিয়ে নাবালিকাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে। নাবালিকার পরিবার খোঁজ খবর করতে থাকলে ফোন মারফত জানতে পারে, তাদের মেয়ে নাককাটিগছ এলাকায় রয়েছে। এর আগেই ভুট্টা খেতে নিয়ে গিয়ে নাবালিকাকে যুবকটি ধর্ষণ করে আরও ৩ যুবকের সহায়তায়। এরপর তারা মেয়েটিকে তুফানগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে রেখে পালিয়ে যায় যুবকেরা।

কথাগুলো শুনতে শুনতে সজীব, সজল ও দীপক বাইরে এসে দাঁড়াল।

 

অপরাধ: সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহের নাট্যকথন

দীপক – কোথাও কোনো শান্তি নেই। তুফানগঞ্জের ধর্ষণের ঘটনা শুনে খুব করে মনে পড়ল বগুড়ার সেই তুফানের কথা। যে একসময় ধর্ষক হয়ে বগুড়া জেলার ইজ্জত ডুবিয়ে দিয়েছিল।

সজল – সেই তুফান এখন কোথায়?

দীপক – তা কি আমার জানার কথা? নতুন একটা খবর শুনলাম। এটা খুনের খবর, অসম রাজ্যের কোকরাঝার জেলার গোসাইগাঁওয়ে পুনরায় অন্ধবিশ্বাসের বলি হয়ে প্রাণ হারাল চার সন্তানের এক জননী। ডাইনি সন্দেহে একদল পাষণ্ড অঞ্জলি নামের মহিলাটিকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে।

সজীব – ঘটনাটা একটু পরিস্কার করে বল।

দীপক – ওই মহিলাটিকে নিজের ঘর থেকে জোর করে টেনে নিয়ে যায়। তার স্বামী সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ খবর পেয়ে অপহৃত মহিলাটির খোঁজে অভিযান শুরু করে বটে, কিন্তু ততক্ষণে পূর্বোক্ত পাষণ্ডরা এক নির্জন স্থানে মহিলাটিকে নিয়ে গিয়ে ধারালো অস্ত্রাঘাতে তাকে হত্যা করে এবং তার মৃতদেহটি একটি গাছে ঝুলিয়ে রাখে।

সজীব – যারা এ কাজ করেছে, তাদের বয়স কত রে?

দীপক – দু’জনের বয়স ৩০ এবং অপর দু’জনের বয়স ১৬ বছর। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে মহিলাটিকে হত্যা করা হয়।

সজল – বর্তমান একুশ শতকের তথ্য প্রযুক্তির চরম অগ্রগতির যুগে ডাইনি সন্দেহে হত্যার ঘটনা বিস্ময় সৃষ্টি করে। আসলে অশিক্ষা -কুশিক্ষা -অজ্ঞানতা

আর প্রবল অন্ধবিশ্বাস থেকে ডাইনি সন্দেহে হত্যা করার প্রবণতার সৃষ্টি হয়। যে কোনও কঠিন ব্যাধিতে কেউ আক্রান্ত হলে তাকে ডাইনি ধরেছে বলে মনে করা হয়।

দীপক – কোথায় না ধর্ষণ, কোথায় না খুন হচ্ছে! বিশ্বজুড়ে ধর্ষণ, খুন, দাঙ্গা চলছেই। এই তো কয়েকদিন আগের ঘটনা – ভালোবেসে বিয়ের ২০ বছর পর স্ত্রী ও দুই কন্যাসন্তানকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগে মানিকগঞ্জের ঘিওর আঙ্গারপাড়া গ্রামের

ঘাতক আসাদুজ্জামান রুবেলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঋণগ্রস্ত হওয়া ও মানসিক হতাশা থেকে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন বলে দাবি অভিযুক্ত রুবেলের।

সজল – দাঙ্গা আবার ঘটল কোথায়?

দীপক – কারাগারে দাঙ্গা নিহত অন্তত ৪৩। এ ঘটনা ঘটেছে লাতিন আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের একটি কারাগারে।

 

দৃশ্য -চার

সজীব, সজল ও দীপক আসে কোচবিহার রাজবাড়ি দেখতে। সেখানে ওদের সাথে পরিচয় হয় তিনটি মেয়ের সঙ্গে। ওদের নাম গীতালি, সাধনা ও পূর্ণিমা। মেয়ে তিনটি হাসতে হাসতে বলল, আমরা এখনও সিঙ্গেল আছি।

সজীব হাত বাড়িয়ে দিতেই গীতালি হাত মিলাল।

সজীব – আমি সজীব।

গীতালি – আমি গীতালি। গান করি।

দীপকের দিকে হাত বাড়াল সাধনা – ওরা দু’জনে হাতে হাত মিলাল।

দীপক – আমি দীপক। আই লাভ ইয়ু।

সাধনা – আমি সাধনা। লাভ ইয়ু টু।

সজল হাত বাড়িয়ে দেয় পূর্ণিমার দিকে –

সজল – আমি সজল, লাভ ইয়ু।

পূর্ণিমা – আমি সুইট পূর্ণিমা, লাভ – লাভ।

ওরা ছয়জন মিলে লেকে নৌবিহার করল।

তিন বান্ধবী গীতালি, সাধনা ও পূর্ণিমা মিলে গান ধরল,

গান –

প্রেম একবারই এসেছিলো নীরবে

আমারই এ দুয়ার প্রান্তে

সে তো হায় মৃদু পায়

এসেছিলো পারিনি তো জানতে

সে যে এসেছিলো, বাতাস তো বলেনি

হায় সেই রাতে দীপ মোর জ্বলেনি

তারে সে আঁধারে চিনিতে যে পারিনি

আমি পারিনি ফিরায়ে তারে আনতে….

 

তিন জুটি একে অপরকে চুমু খেল।