ঘানা দেশ সম্বন্ধে কিছু চমৎকার অজানা তথ্য


পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানা সম্বন্ধে আমাদের জানা শোনা খুব বেশি নেই। ফুটবলপ্রেমী এই দেশটির একজন ফুটবলার ইব্রাহিম একসময় খেলেছেন ঢাকার প্রথম বিভাগ ফুটবলে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে। এছাড়া ঘানার আবেদি বিখ্যাত ফুটবলার হিসাবে পেলে সারা বিশ্বের সমীহ আদায় করেছিলেন। ঘানা দেশ সম্বন্ধে কিছু চমৎকার অজানা তথ্য নিয়ে লিখেছেন দুই বাংলার অন্যতম সেরা ভ্রমণ লেখক লিয়াকত হোসেন খোকন

Table of Contents

প্রাগৈতিহাসিক যুগের নিদর্শন প্রমাণ করে প্রাচীন ঘানাতে ব্রোঞ্জ যুগ থেকে মানুষের বসবাস ছিল। এগারো শতক পর্যন্ত বিভিন্ন গোষ্ঠী ঘানা শাসন করেছে। তবে ঘানাতে ১৬শতকে ঘানার বর্তমান অধিবাসীদের আবির্ভাব ঘটে। এর আগে এগারো শতকের প্রথম দিকে আকান জনগোষ্ঠী বুনুমান নামের জনবসতি গড়ে তোলে। এই অঞ্চলেই ষোল শতকে গা ও দাগোমবা নামের দু’টি ভিন্ন রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল।

ঘানা কোন জাতি?

ঘনবসতিপূর্ণ ঘানা দেশটিতে ১০০ -রও বেশি জাতির লোকের বাস। কিন্তু অন্যান্য আফ্রিকান দেশগুলোর মত এখানে দেশ বিভাজনকারী জাতিগত সংঘাত তেমন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি। আক্রা দেশের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী।

ঘানা দেশের সরকারি ভাষা ইংরেজি হলেও বেশির ভাগ ঘানাবাসী কমপক্ষে একটি আফ্রিকান ভাষায় কথা বলতে পারেন।

ঘানার অর্থনীতি আফ্রিকার অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতিগুলির একটি, কিন্তু এখনও কৃষি দেশটির অর্থনীতির মূল ভিত্তি এবং এখানকার বেশির ভাগ লোকই দরিদ্র।

স্বর্ণখনিশিল্প, চকোলেটের উপাদান কাকাও উৎপাদন এবং পর্যটন দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

কয়েক বছর আগে ঘানা সোনার একটি উৎস বলে পরিচিত ছিল। ১৫শ ও ১৬শ শতকে যেসব ইউরোপীয় এখানে সোনার খোঁজে এসেছিলেন, তারা অঞ্চলটিকে গোল্ড কোস্ট নাম দেন। ১৪৮২ খৃষ্টাব্দে পর্তুগিজরা যখন ঘানার উপকূলে বসতি স্থাপন শুরু করে তখন ঘানার বেশ কয়েকটি গ্রামে গা জাতির লোকেরা বাস করত। গা জাতির লোকেরা ছিল আফ্রিকান।

ঘানা ধর্ম:

ঘানার অধিবাসীদের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মের লোকজন দেখা যায়। ঘানায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা প্রায় ৭১ শতাংশ। ইসলাম ধর্মের লোক প্রায় ১৯ শতাংশ।এছাড়া হিন্দু ধর্মের অনুসারীরাও সেখানে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সামরিক ক্যু এবং অর্থনৈতিক সমস্যা ১৯৬০ -এর দশক থেকে ১৯৮০ -এর দশক পর্যন্ত ঘানাকে বিপর্যস্ত করে রাখে। ১৯৯০ -এর দশকে ঘানাতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আফ্রিকান রাজনীতিতে একটি নেতৃস্থানীয় দেশ হিসেবে ঘানা আবির্ভূত হয়। ১৯৯৭ খৃষ্টাব্দে ঘানার এক কূটনীতিক কফি আনান জাতিসংঘের মহাসচিব হন।

ঘানা শব্দের অর্থ যোদ্ধা রাজা – মধ্যযুগীয় ঘানা সাম্রাজ্য থেকে এ নামের উৎপত্তি। বর্তমান ঘানা থেকে উত্তর ও পশ্চিম দিকে অবস্থান ছিল ঘানা সাম্রাজ্যের।

১৯৫৭ খৃষ্টাব্দে ব্রিটিশ কলোনি থেকে গোল্ড কোস্ট স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার ছয় মাসের মধ্যে গোল্ড কোস্ট নাম পাল্টিয়ে এ দেশের নাম রাখা হয় ঘানা।

ঘানা মুসলিম জনসংখ্যা কত?

ঘানায় মুসলমানদের হার ক্রমাগত বাড়ছে। আফ্রিকান এই দেশটিতে গড়ে প্রতি পাঁচ জনের একজন মুসলমান। সর্বশেষ আদমশুমারী অনুযায়ী, ঘানার মুসলিম জনসংখ্যার হার শতকরা ১৯.৯০ ভাগ (প্রায় বিশ শতাংশ)।

ঘানাকে গানাও বলা হয়। এটি পশ্চিম আফ্রিকার একটি রাষ্ট্র। এ দেশটি বহু বছর ধরে ব্রিটিশদের অধীনে ছিল।

আধুনিক ঘানার কয়েকশো মাইল উত্তর -পশ্চিমে নাইজার নদীর তীরে অবস্থিত মধ্য যুগীয় সাম্রাজ্য ঘানার নামে দেশটির নামকরণ করা হয়। স্বাধীনতার পর আফ্রিকান বাকী দেশগুলির স্বাধীনতার জন্য ঘানা নেতৃত্ব দিয়েছিল।

ঘানা দেশের নীতিবাক্য হলো – ‘স্বাধীনতা ও সুবিচার’।
ঘানার আয়তন মোট ২,৩৮,৫৩৫ বর্গকিলোমিটার।
জনসংখ্যা – ২,৭০,৪৪,০০০ জন।

ঘানার রাজধানী বসেছে আক্রায়। আক্রা ঘানার বৃহত্তম শহর। শহরটি ঘানার দক্ষিণ -পূর্বভাগে আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বাহু গিনি উপসাগরের উপকূলে অবস্থিত। নগরীটি আংশিকভাবে সমুদ্রের কিনারে ৮ থেকে ১২ মিটার উচ্চতার একটি খাড়া পর্বতগাত্রের উপরে অবস্থিত। আর সেখান থেকে এটি উত্তর দিকে ঢেউ খেলানো আক্রা সমভূমিতে প্রসারিত হয়েছে। আক্রা শব্দটি আকান ভাষা থেকে এসেছে। আকান ভাষা নক্রান। এই নক্রান শব্দটি থেকে এর উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। নক্রান শব্দের অর্থ পিঁপড়া। তবে কালো পিঁপড়ার একটি ক্ষুদ্র প্রাণী বাস ছিল এই অঞ্চলে। যে কারণে পিঁপড়া অর্থাৎ নক্রান থেকে শহরের নামটি হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। 

কেউ কেউ আক্রাকে পিঁপড়ার শহর বলে থাকে।

বর্তমান আক্রা শহরটি ব্রিটিশ, ডেনিশ এবং ওলন্দাজদের তৈরি দুর্গকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এখানের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় হলো – ব্রিটিশ জেমস ফোর্ট, ডেনিশ ফোর্ট ক্রিশ্চিয়ানবার্গ, উশার ফোর্ট।