সদ্য সমাপ্ত টি-২০ সিরিজে জয়ী স্বাগতিক দল। বাংলাদেশের জন্য যা অনন্য অর্জন। তবে অষ্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ সিরিজে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান গড়েছেন নতুন রেকর্ড। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান যেসব রেকর্ড গড়লেন নতুন করে নতুন করে তা দেখে নিন।
তিন সংস্করণের ক্রিকেটে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। নিকট অতীতে শুধুমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস ছিলেন চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার। সাকিবের ন্যায় পারফরমেন্সের ঝলকে কোন দেশকে একাই এগিয়ে নেওয়ার মত লড়াকু অলরাউন্ডার তেমন একটা চোখে পড়েনা আজকাল।
অষ্ট্রেলিয়া তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই বিশ্বের পরাশক্তি। নিজের মাঠে কিংবা প্রতিপক্ষের মাঠে তারা সমান কার্যকর। তুলনায় বাংলাদেশ টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে এখনও বেশ দুর্বল। এই ফরম্যাটের ক্রিকেট যেন বাংলাদেশের জন্য কঠিন এক ধাঁধাঁ।
তবে দলীয়ভাবে বাংলাদেশের জন্য টি-টুয়েন্টি কঠিনতম চ্যালেন্জ হলেও সাকিব আল হাসানের জন্য সেরকম কিছু না। মাঠে তিনি সাবলিল। নিজে যেহেতু অলরাউন্ডার, ব্যাটিংয়ের ব্যর্থতা পুষিয়ে দিতে পারেন বোলিংয়ে। আবার বোলিংয়ে ব্যর্থ হলে ব্যাটিং দিয়ে কভার করে দেন। ফিল্ডার হিসাবেও তার হাত বিশ্বস্ত।
অষ্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও কথা বলেছে তার ব্যাট বল দুটোই। এই সিরিজেই আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেট ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় বোলার হিসাবে ১০০ উইকেটের ল্যান্ডমার্ক পেরিয়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেট ইতিহাসেও নিজের নাম পাকা করে নিয়েছেন সাকিব।
বোলিংয়ের কথা বাদ দিলে ব্যাটিংয়েও রেকর্ড গড়েছেন সাকিব। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে ১০০০ রানের ভিআইপি ক্লাবের সদস্য হয়েছেন শেষ ম্যাচে। ব্যাক্তিগত অর্জন হিসাবে সাফল্যের আরেকটি মাইলফলক হয়ে থাকবে এই রেকর্ড।
সিরিজে সাকিবের সাফল্য অবশ্য একপেশে হয়নি। চতুর্থ ম্যাচে অষ্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান খৃষ্টিয়ানের হাতে বেধড়ক মার খান সাকিব। তার বলে এক ওভারে পাঁচটি ছক্কাসহ ৩০ রান তুলে নেন খৃষ্টিয়ান। ম্যাচে হারে বাংলাদেশ।
হয়তো এই ঘটনা তাতিয়ে থাকবে সাকিব আল হাসানকে। পরের ম্যাচেই তিনি কেন বিশ্ব সেরা সেটা বুঝিয়ে দিলেন। নিজের চার ওভারের কোটা পূরণ করার সুযোগ হয়নি। কারন তার শেষ ওভার পূর্ণ হওয়ার আগেই অলআউট অষ্ট্রেলিয়া!
২২টি বল করেছেন। এক ওভার মেইডেন। রান দিয়েছেন এক ডিজিটের। ৯ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে অষ্ট্রেলিয়ার লেজ মুড়ে দেন সাকিব। নিজেদের সর্বনিম্ন রানের লজ্জায় পড়ে অষ্ট্রেলিয়া সাকুল্যে তুলেছে ৬২ রান! ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের ব্যবধান এর থেকে মাত্র দুই কম।
আরও পড়ুন: টি-টুয়েন্টিতে ক্যাঙারু বাহিনীকে ঘায়েল করে টাইগারদের সিরিজ জয়
শেষ ম্যাচে সাকিবের এই উজ্জল পারফর্মেন্স তাকে ম্যান অব দ্য সিরিজের ক্যান্ডিডেট হিসাবে অপ্রতিদ্বন্দী করে তোলে। এর আগের ম্যাচ পর্যন্ত হিসাবে নিলে মুস্তাফিজও ছিলেন এই তালিকায়। কিন্তু শেষ ম্যাচে সাকিব সেই হিসাব কষার সুযোগ আর দেননি।
সর্বশেষ এই ম্যান অব দ্য সিরিজ লাভ করে সাকিব বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেকে নিয়ে গেছেন আরেক উচ্চতায়। সর্বোচ্চ ম্যান অব দি সিরিজ জয়ের তালিকায় এখন তিনি তৃতীয় স্থানে। ভারতের দুই মহারথী শচীন টেনডুলকার এবং বিরাট কোহেলীর পরই তার নাম।
শচীন টেন্ডুলকার তার দীর্ঘ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ১৮৩ সিরিজ খেলে এই পুরষ্কার পেয়েছিলেন ২০ বার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলী ১৩২ সিরিজে পেয়েছেন ১৯ বার। সাকিব আল হাসান ১৩০ সিরিজে পেয়েছেন ১৬ বার।
সাকিবের পরে আছেন ওয়েষ্টইন্ডিজের বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান বর্ষীয়ান ক্রিস গেইল। তিনি আছেন ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায়। ১৪০ সিরিজ শেষে তার অর্জন ১২ বার। এর পরের স্থানে আছেন ভারতীয় অলরাউন্ডার রবী চন্দ্র অশ্বীন। অশ্বীন ৮৩ ম্যাচে সিরিজ সেরা হয়েছেন ৯ বার।
দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যান অব দ্য সিরিজ লাভের তালিকায় সাকিব শীর্ষে। বিশ্ব তালিকায়ও অচিরেই তিনি পৌঁছে যাবেন দ্বিতীয় স্থানে। তবে প্রথম স্থান নিয়ে বিরাট কোহেলীর সাথে সহসাই প্রতিদ্বন্দিতায় অবতীর্ন হবেন সাকিব আল হাসান এটা পরিষ্কার।
অষ্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ সিরিজে সাকিব আল হাসান যেসব রেকর্ড গড়লেন তা অতুলনীয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটকেও তিনি পৌঁছে দিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। অনেকদিন থেকেই তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতিচ্ছবি।
ধারাবাহিকভাবে নিজের খেলার মান ধরে রেখে বিশ্ব ক্রিকেটের উঁচু আসনে পৌঁছেছেন এমন ক্রিকেটার কালে-ভদ্রে জন্মায়। সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের সেরকমই একজন ক্ষণজন্মা ক্রিকেটার।
যদিও মাঠের ভিতরের এবং বাইরের বিষয় নিয়ে সাকিব আল হাসান প্রায়ই বিতর্কের মধ্যে পড়েন। ভক্ত-সমর্থকদের উল্লাস যেমন আছে সাকিবকে নিয়ে, বিতর্কও আছে তেমনি। এই সব অবশ্য বিশ্বের সব বড় তারকাদের নিয়েই হয়। তাই বিশ্বক্রিকেটে সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তারকা। বর্তমানে কিংবা নিকট ভবিষ্যতে তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবেন এমন কাউকে আপাতত দেখা যাচ্ছে না।