লন্ডন শহরে ভ্রমণে আসার আগে যারা একটু খোঁজ-খবর নিয়ে আসেন তাদের জন্য একটি পরিচিত গন্তব্য পর্তোবেলো রোড মার্কেট। বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন শহর থেকে আগত পর্যটকদের কাছে একটি অন্যতম প্রধান আকর্যণ লন্ডনের পর্তবেলো মার্কেট।
পশ্চিম লন্ডনের নটিংহিলগেট আন্ডার গ্রাউন্ড ষ্টেশন থেকে বের হয়ে মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই পৌঁছা যায় পর্তোবেলো রোড মার্কেট রোডে। এটি প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা একটি ষ্ট্রিট মার্কেট। পর্তোবেলো রোড মার্কেটের তিনটি অংশ। প্রথম অংশ শুরু হয়েছে পেমব্রিজ রোড থেকে। ওয়েষ্টবর্ণগ্রোভ রোডে গিয়ে শুরু হয়েছে মার্কেটের মুল অংশ। এখান থেকে এক নাগাড়ে ব্লেনহ্যাম ক্রিসেন্ট এবং লেডবুরি রোড পর্যন্ত আছে সরাসরি স্থানীয় কাউন্সিল নিয়ন্ত্রিত মার্কেটের অংশ। এরপর শুরু হয়েছে গলবর্ণ রোড অংশ। এই অংশে কিছুটা কম দামে সৌখিন জিনিসপত্র পাওয়া যায়। বিভিন্ন কারনে এই পর্তবেলো মার্কেট রোড খ্যাতি ছড়িয়েছে।
পর্তোবেলো নামকরনের ইতিহাস
পর্তোবেলো রোড মার্কেটের নামকরন হয়েছে পর্টোবেলো ফার্ম থেকে। এখানে ১৭৪০ সালে একটি ফার্ম স্থাপিত হয় বর্তমান মার্কেটের গলবর্ণ অংশে। সেসময়ে আজকের পানামার একটি বন্দর নগরী পুয়ের্তোবেলো যা ছিল তৎকালীন স্পেনিশ কলোনী, ব্রিটিশরা যুদ্ধের মাধ্যমে কয়েক সপ্তাহের জন্য দখলে নিয়েছিল। সেই যুদ্ধ জয়ের উৎসব করতে গিয়ে লন্ডনের আলোচিত এই পর্তোবেলো ফার্মের নামকরন করা হয়। একই সময়ে স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরায় একটি বিখ্যাত সী বীচের নামকরন করা হয় পর্তোবেলো বীচ।
১৮৬৪ সালে রেলওয়ের প্রয়োজনে পর্তোবেলো ফার্ম বন্ধ হয়ে যায়। এখনকার মার্কেট শুরু হয় রেলওয়ের নির্মান কাজের শ্রমিক ও স্থানীয় অভিজাত ধনীক শ্রেণীকদের প্রয়োজনে।
বিংশ শতাব্দীতে এসে পর্তোবেলো মার্কেট এন্টিক মার্কেট হিসাবে পরিচিতি পায় ১৯৪০ সাল থেকে।
পর্তোবেলো রোড মার্কেট কেন বিখ্যাত?
লন্ডনের পর্তোবেলো মার্কেতের খ্যাতি মূলত: এর ষ্ট্রিট মার্কেটের কারনেই। এখানে সপ্তাহের প্রত্যেকদিনই খোলা। তবে এর বিশেষত্ব হল সপ্তাহের বন্ধের দিন অর্থাৎ শনি বারে বসে এন্টিক মার্কেট। এটি যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী বেঁচাকেনার মার্কেট। বিভিন্ন রকমের প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রীর সমাহারে এই মার্কেট অনেক সমৃদ্ধ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশসহ যুক্তরাজ্যের প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী সংগ্রাহকদের অতিপ্রিয় এই পর্তোবেলো মার্কেট।
এই ষ্ট্রিট মার্কেটটি লন্ডন শহরের অন্যতম অভিজাত এলাকা কেনসিংটনে অবস্থিত। এখানে সাধারনত অতি ধনী পরিবারের লোকজন বাস করেন। স্থানীয় অধিবাসী ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভিআইপি ব্যাক্তিরা তাদের সেকেন্ড হোম হিসাবে এই এলাকার বিভিন্ন প্যালেস হাউস কিনে রেখেছেন। আর পশ্চিম লন্ডনের বেশিরভাগ এলাকাতেই লন্ডনে বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় স্থানসমুহ। আছে বেশ কয়েকটি জাদুঘর। বেড়াতে গিয়ে সেসব এলাকায় দিন কেটে যায় মনের আনন্দে।
তবে প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী ছাড়া অন্যান্য আইটেমের ছড়াছড়িও আছে এই মার্কেটে। পুরনো জিনিসপত্র, কাপড়-চোপড়, জুয়েলারী, খাবার দাবার সবই পাওয়া যায় এখানে।
আরও পড়ুন: লন্ডন আই : আর্কিটেক্ট দম্পতির স্বপ্নের ফসল
পর্তোবেলো মার্কেটে চিত্রায়িত ও ১৯৯৯ সালে নির্মিত বিখ্যাত সিনেমা নটিংহিল এই মার্কেটের পটভূমিতে নির্মিত। সিনেমাটি বক্স অফিসে সুপারহিট হলে এই মার্কেটের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দেশ-দেশান্তরে। পর্যটকরা এখনও পর্তবেলো মার্কেটে এসে খুঁজেন একটি দোকানের নীল দরজা যা সিনেমাটিতে দেখানো হয়েছিল। যদিও সেই দরজাটি এখন আর নেই।
পর্তোবেলো মার্কেটে বেড়ানোর সেরা সময়:
আগেই বলা হয়েছে লন্ডনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ পর্তোবেলো মার্কেট প্রতিদিনই খোলা। তবে শনিবার লোকারণ্য হয়ে উঠে। বছরের যেকোন সময় এখানে বেড়াতে এলে শনিবার বরাদ্ধ রাখুন পর্তোবেলো মার্কেটের জন্য। প্রতিবছরের আগষ্ট মাসের দুইদিন এই এলাকায় বসে নটিংহিল কার্ণিভাল। ইংল্যান্ডে বসবাসরত আফ্রিকান এবং ওয়েষ্ট ইন্ডিয়ান কমিউনিটির লোকজন তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক ঝমকালো প্রদর্শনী করেন এই পথ উৎসবে। পুরো দুইদিনব্যাপী অত্যন্ত জমজমাট এই উৎসবে পথ সংগীত, সার্কাস এবং সমবেতদের মনোরন্জনের জন্য নানা রকমের বৈচিত্র্যময় আয়োজন পরিলক্ষিত হয়। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই পথ উৎসব দেখতে চাইলে আপনি আগষ্ট মাসেও আসতে পারেন পর্তোবেলো মার্কেটে।
এ বিষয়ে আরও পড়ুন লন্ডনে ট্যুরিষ্ট বাসে ভ্রমণ
-বদরুল হোসেন বাবু