বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এক অপূর্ব প্রাকৃতিক বিস্ময়। ১২০ কিলোমিটারেরও বেশি দৈর্ঘ্য নিয়ে এই সৈকত বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা অবিচ্ছিন্ন বালুকাময় উপকূল হিসেবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত—প্রতি মুহূর্তে এখানকার দৃশ্যপট বদলে যায়, যেন প্রকৃতি নিজেই রংতুলি দিয়ে ছবি আঁকে।

সকালে যখন সূর্য লালচে আভায় সমুদ্রের গভীর নীলকে ছুঁয়ে ওঠে, তখন বালুর ওপর পায়ের ছাপ পড়ে যেন স্বপ্নের পথ। দূরে মাঝি-মাঝি ঝিকঝিক করে জেলেদের নৌকা, আর কাছাকাছি শঙ্খ-ঝিনুকের ঝিকিমিকি। দুপুর গড়ালে তরঙ্গের গর্জন মিশে যায় হাওয়ার সুরে—যেন সমুদ্র গান গায়। বিকেলে সোনালি আলোয় বালুকাবেলা যেন সোনার শহর, আর সন্ধ্যায় লাল আকাশের নিচে দাঁড়ালে মনে হয়, পৃথিবীটা থেমে গেছে শুধু এই মুহূর্তের জন্য।

শুধু দৈর্ঘ্য নয়, এখানকার বৈচিত্র্যও অতুলনীয়। উত্তরে কলাতলী থেকে শুরু করে দক্ষিণে টেকনাফ পর্যন্ত—প্রতি কিলোমিটারে ভিন্ন স্বাদ। কোথাও নারকেল গাছের সারি, কোথাও লাল কাঁকড়ার দৌড়, আবার কোথাও হিমছড়ির পাহাড়ি ঝর্ণা। ইনানীতে পাথরের খেলা, সেন্ট মার্টিনে প্রবালের রাজ্য—সবই একই সৈকতের অংশ।

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার শুধু ভ্রমণ নয়, এক অনুভূতি। এখানে এসে মানুষ হারায় সময়ের হিসাব, খুঁজে পায় নিজেকে। স্থানীয় মাছভাজা, শুঁটকির ঝাল, রাতের বারবিকিউ—খাবারও যেন সমুদ্রের স্বাদ বহন করে। হোটেল-রিসোর্ট থেকে শুরু করে সাধারণ খাবারের দোকান—সবই বাজেটে মানানসই।

পরিবেশ সচেতনতাও এখানকার অংশ। প্লাস্টিকমুক্ত অভিযান, কচ্ছপ সংরক্ষণ প্রকল্প—পর্যটকদের সচেতনতা বাড়ছে। সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে যখন দেখবেন স্থানীয় শিশুরা বালুতে আঁকে ‘সমুদ্র আমাদের বন্ধু’—তখন বুঝবেন, এই সৈকত শুধু দর্শন নয়, দায়িত্বও।

রাতে পূর্ণিমার চাঁদ যখন সমুদ্রে রুপোলি পথ বানায়, তখন মনে হয়—বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার কেবল ভূগোল নয়, এক জীবন্ত কবিতা। এখানে আসুন, হাঁটুন, শুনুন—সমুদ্র আপনাকে নিজের গল্প শোনাবে।