প্রকৃতির কাছে বিবশ মানুষ। এখন শীতকাল, শীতের কঠিন দিনগুলির আগমনবার্তা সবাইকে ভাবিয়ে তোলে। শীতে বাংলাদেশের প্রকৃতি যেমন থাকে, তা অসহনীয় নয়, বলা যায় আমেজপূর্ণ। শীতের সময়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন উৎসবে মুখরিত হয়ে ওঠে।
কিন্তু বিশ্বের সর্বত্র শীতকালের প্রভাব সমান নয়। প্রকৃতি সেখানে প্রকৃতই কঠিন রূপে দেখা দেয়। তুষারপাত এতটাই ঘন হয়ে পড়ে যে স্থানীয়দের চলাফেরা, আনন্দ -উৎসব অনেক সময় অসহনীয় হয়ে পড়ে।
বর্তমান সময়ে খবরের শীর্ষে রয়েছে আমেরিকার তুষারঝড়ের হাড় হিম করা পরিস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ এলাকা বিপর্যস্ত। তুষারঝড়ের প্রকোপে পড়ে মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কোনও এলাকায় ৪৩ ইঞ্চি তুষারপাতের ফলে স্তব্ধ জনজীবন। বড়দিনের আনন্দ উৎসবের দিনে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দারা।
বিশ্লেষকরা মনে করেন আমেরিকার এ বছরের তুষারঝড় ভেঙে দিয়েছে পুরনো সব রেকর্ড। ১৯৭৭ খৃষ্টাব্দের প্রচন্ড তুষারঝড়ে অত লোকের প্রাণহানি ঘটেনি যতটা এবার হয়েছে।
আমেরিকায়ই যখন এমন অসহনীয় অবস্থা, তখন সর্বাধিক শীতল স্থানের পরিস্থিতি কেমন হতে পারে, তা আন্দাজ করাই যায়।
বিশ্বের শীতলতম স্থানের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে অ্যান্টার্কটিকা উপমহাদেশ। সূর্য সেখানে অনুপস্থিত। মানুষের বসবাসের অযোগ্য। তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৮৩ ডিগ্রির নিচে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরোভো অঙ্গ রাজ্যের ‘ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টার’ -এর বিজ্ঞানী ২০১৩ খৃষ্টাব্দের আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের এক সভায় জানিয়েছিলেন, অ্যান্টার্কটিকার গড় তাপমাত্রা ৯৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই পরিস্থিতি পৃথিবীর সকল দেশের সবাইকেই চিন্তার বাইরে, কারণ মাইনাস ডিগ্রির সম্মুখীন আমাদের বাংলাদেশে সাধারণত হতে হয় না।
জনসংখ্যা সম্বলিত ঠান্ডা দেশ হিসেবে নাম রয়েছে রাশিয়ার যেখানে বছরে দু -মাস মাত্র সূর্যের মুখ দেখতে পাওয়া যায়। গরমকালেও তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৩ ডিগ্রি। গ্রীষ্ম ঋতু বলে বাস্তবে সেখানে কিছু নেই।
সবচেয়ে বেশি তুষারপাতের দেশ কাজাখস্থান। গরমকালেও সেখানে বরফাচ্ছন্ন থাকে।
তবে আমেরিকার পরিস্থিতি মিশ্র। উত্তর আমেরিকায় সব থেকে বেশি ঠান্ডার প্রকোপ থাকে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে জনমানবহীন আলাস্কায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। আবার বিশ্বের সবচেয়ে গরম স্থানও যুক্তরাষ্ট্রেই। ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক সবচেয়ে উষ্ণ অঞ্চল।
বরফ মানেই আইস। তাই আইসল্যান্ড যে বরফের দেশ, তা সহজেই বোঝা যায়। পৃথিবীর দুই মেরুতে দুই আবহাওয়া। কখনও তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সূর্যের আলো প্রায় পৌঁছায় না – এমন দ্বীপ হলো গ্রিনল্যান্ড। সারাবছরই বরফাবৃত থাকে গ্রিনল্যান্ড।
ফিনল্যান্ড, এস্টনিয়া, মঙ্গোলিয়াও বিশ্বের দশটি শীতপ্রধান দেশের তালিকায় রয়েছে।
প্রকৃতি তার নিজের খেয়ালে রচনা করেছে বৈচিত্র্যময় পরিবেশ, মানুষ সেখানে প্রকৃতির দাস। অর্থ বা ডলারের প্রাচুর্য দিয়ে প্রকৃতিকে কেনা সম্ভব নয়। আমেরিকার নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের মহাসঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতি তার প্রমাণ।