উজবেকিস্তান প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সভ্যতাকে সংযুক্তকারী বিখ্যাত রেশম পথের উপর অবস্থিত। উজবেকিস্তানের জাদুঘরগুলিতে প্রায় ২০ লক্ষের মত প্রত্নতত্ত্ব বস্তু রয়েছে। যে গুলি মধ্য এশিয়ায় প্রায় ৭ হাজার বছর ধরে বসবাসকারী বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে। অনেক পর্যটক এই সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্বন্ধে জানার উদ্দেশ্যে উজবেকিস্তানে ভ্রমণ করে থাকেন।
Table of Contents
-
-
- উজবেকিস্তানের সিগনেচার ডিশ হল পোলাও বা প্লব বা ওশ। যা সাধারণত চাল, মাংসের টুকরো এবং ভাজা গাজর ও পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি করা হয়।
- এটি একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এ দেশে ১২টি প্রদেশ, একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র এবং একটি রাজধানী শহর নিয়ে দেশটি গঠিত।
- উজবেকিস্তানে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। ১৯৬৬ খৃষ্টাব্দে এমনই এক ভূমিকম্পে রাজধানী তাশখন্দের বেশির ভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
-
- উজবেকিস্তানের রাজধানী
আবার অনেক পর্যটক উজবেকিস্তানের পাহাড়গুলি চড়া এবং তুষারাবৃত পাহাড়গুলোতে স্কি করার জন্য আসেন।
উজবেকিস্তানের সিগনেচার ডিশ হল পোলাও বা প্লব বা ওশ। যা সাধারণত চাল, মাংসের টুকরো এবং ভাজা গাজর ও পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি করা হয়।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে শর্বা বা শুর্ব ; চর্বিযুক্ত মাংসের বড় টুকরো বা মাটন ; তাজা শাকসবজি দিয়ে তৈরি এক ধরনের স্যুপ ; মোমো জাতীয় খাবার – ইত্যাদি।
উজবেকিস্তানের প্রায় তিন চতুর্থাংশ লোক উজবেক ভাষায় কথা বলে। শতকরা প্রায় ১৪ ভাগ লোক রুশ ভাষায় এবং প্রায় ৪ ভাগ লোক তাজিক ভাষায় কথা বলে। তুর্কমেন, কাজাখ, কিরগিজ ভাষাও এ দেশে প্রচলিত।
উজবেকিস্তান মধ্য এশিয়ার একটি স্থলবেষ্টিত দেশ।
এটি একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এ দেশে ১২টি প্রদেশ, একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র এবং একটি রাজধানী শহর নিয়ে দেশটি গঠিত।
উজবেকিস্তান সীমান্তে পাঁচটি স্থলবেষ্টিত দেশ রয়েছে। যেমন, এ দেশের উত্তরে কাজাখস্তান, উত্তর পূর্বে কিরগিজস্তান, দক্ষিণ পূর্বে তাজিকিস্তান, দক্ষিণে আফগানিস্তান এবং দক্ষিণ -পশ্চিমে তুর্কমেনিস্তান।
উজবেকিস্তানের শতকরা ৮০ ভাগ এলাকা সমতল মরুভূমি। দেশের পূর্বভাগে রয়েছে সুউচ্চ পর্বতমালা আর সেগুলোর উচ্চতা সাড়ে চার হাজার মিটার। উজবেকিস্তানের দক্ষিণ -পূর্ব প্রান্ত তিয়ান শান পর্বতমালার পশ্চিম পাদদেশ নিয়ে গঠিত। এ দেশের উত্তরের নিম্নভূমি কিজিলকুম নামের এক বিশাল মরুভূমি, যা দক্ষিণ কাজাকিস্তানেও প্রসারিত হয়েছে। ফের্গানা উপত্যকা উজবেকিস্তানের সবচেয়ে উর্বর অঞ্চল, এটি কিজিলকুম মরুভূমির ঠিক পূর্বে অবস্থিত এবং এর উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে পর্বতমালা দ্বারা বেষ্টিত। সির দরিয়া নদী এই অঞ্চলটিকে কিজিলকুম মরুভূমি থেকে পৃথক করেছে।
আমু দরিয়া এ দেশের উল্লেখযোগ্য একটি নদী।
উজবেকিস্তানে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। ১৯৬৬ খৃষ্টাব্দে এমনই এক ভূমিকম্পে রাজধানী তাশখন্দের বেশির ভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
উজবেকিস্তানের রাজধানী
উজবেকিস্তানের রাজধানী বসেছে তাসখন্দে। এ শহরটি দেশের বৃহত্তম শহর। শহরটি কাজাখস্তান সীমান্তের নিকটবর্তী উত্তর -পূর্বে অবস্থিত। এ শহরের জনসংখ্যা ২,৪৮৫,৯০০ জন। তাসখন্দের দর্শনীয় হলো – স্কাইলাইন, হুমো আইস ডোম, আমির তৈমুর মিউজিয়াম, সুপ্রিম অ্যাসেম্বলি ভবন, নাভোই সাহিত্য যাদুঘর ; কোকেলদাস মাদ্রাসা, তেলিয়াশাখ মসজিদ, ইউনুস খানের সমাধিস্থল – এই ইউনুস খান ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের পিতামহ ; প্রিন্স রোমানভের প্রাসাদ, আলিশার নাওই অপেরা এবং ব্যালে থিয়েটার ; ফাইন আর্টস মিউজিয়াম ; ফলিত আর্টস যাদুঘর ;। তাসখন্দ শহরটি স্থাপিত হয় ৫ থেকে ৩ শতাব্দী খ্রিস্টপূর্ব সময়ের মধ্যে। ৮ম শতাব্দীতে ইসলামিক সংস্কৃতির আগমনে পূর্বে তাসখন্দ তার প্রাথমিক ইতিহাসে সোগদিয়ান এবং তুর্কি সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। ১২১৯ খৃষ্টাব্দে চেঙ্গিস খান তাসখন্দ আক্রমণ করেন। এরপর শহরটি পুনর্নিমাণ করা হয়। এ শহরটি তখন সিল্ক রোডের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়।
তবে উজবেকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হল সমরখন্দ, এ শহরটি রেশম পথের মধ্য স্থলে অবস্থিত। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলোর একটি। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতকে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানকার অধিবাসীরা মূলত তাজিক। ৩২৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিক বীর আলেকজান্ডার এ শহরটি বিজয় করেন। সমরখন্দের প্রধান আকর্ষণ – রেগিস্তান নামের এলাকা, যার চারপাশ ঘিরে রয়েছে অনেকগুলি প্রাচীন মাদ্রাসা। এছাড়াও এখানে অনেক বিখ্যাত মসজিদ ও স্মৃতিস্তম্ভ আছে। উজবেকিস্তানের সমরখন্দ প্রদেশের রাজধানী এই সমরখন্দ। ইসলাম শিক্ষায় উচ্চশিক্ষার জন্য ইসলামিক সেন্টার এবং চীন ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী স্থলপথ সিল্ক রোডের মধ্যবর্তী অবস্থানের জন্য সমরখন্দ বেশ আলোচিত। এ শহরের অবশিষ্ট ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে বিবি খানম মসজিদ সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত। রেজিস্তান এই শহরের প্রাচীন কেন্দ্র। ২০০১ খৃষ্টাব্দে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কর্তৃক প্রায় তিন হাজার বছর পুরনো এই ঐতিহ্যবাহী শহরকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। সমরখন্দ শব্দটি এসেছে প্রাচীন ফার্সি ভাষার আসমারা শব্দ থেকে যার অর্থ পাথর বা পাষাণ। আর সোজিয়ান ভাষার কন্দো শব্দ থেকে – যার অর্থ কেল্লা বা শহর। এ শহরের উল্লেখযোগ্য মসজিদ হলো বিবি খানম মসজিদ।
প্রশাসনিক অঞ্চল সমূহ হল – আন্ডিজান অঞ্চল ; বুখারা অঞ্চল ; ফারগানা অঞ্চল ; জিজ্জাখা অঞ্চল ; কারাকাপাকস্তান অঞ্চল ; কাশকদারিও অঞ্চল ; খোরেজাম অঞ্চল ; নামানগান অঞ্চল ; নাভৈই অঞ্চল ; সমরখন্দ অঞ্চল ; সুরখানদারিয়া অঞ্চল ; সিরদারিয়া অঞ্চল ; তাসখন্দ সিটি অঞ্চল ; তাসখন্দ অঞ্চল।
উজবেকিস্তান ইউরেনিয়াম উৎপাদনে পৃথিবীর মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে।
বক্সিং এখানকার জনপ্রিয় খেলা। মুহাম্মদ আবদুল্লাহ এ দেশের খ্যাতনামা বক্সার। ফুটবল খেলার জন্যও এ দেশটির নামধাম রয়েছে। ফুটবল রেফারি হিসেবে এ দেশের রাভশান ইরমাটোভের খ্যাতি রয়েছে। তিনি সর্বাধিক সংখ্যক বিশ্বকাপ ম্যাচ পরিচালনা করেছেন।
লেখক পরিচিতি: