বাংলাদেশে কী আজীবন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাকে নিয়েই হৈচৈ করে যেতে হবে?

চার বছর পরে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কি খেলবে?

আবার চার বছর পরে বসবে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। তখন বাংলাদেশ কি বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলবে? চার বছর পর বাংলাদেশ ফুটবলে যেন এক মহাকাব্য সৃষ্টি করতে পারে – সে অপেক্ষা এখন আমাদের। আর যদি সেটা সম্ভব হয় তবে কত না ছন্দের হেরফের হবে, কত ওঠা -নামা, হর্ষ -বিষাদ ঘটবে বাংলাদেশকে নিয়েও। বিদেশি সমর্থকদের রক্তচাপ ক্রমাগত ওঠানামা করবে বাংলাদেশকে নিয়ে। বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে। যেমন এখন হচ্ছে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে, ঠিক চার বছর পর বাংলাদেশকে নিয়ে – এমনটি হবে কি? তবুও প্রশ্ন, বাংলাদেশের ফুটবল এখন কোথায় দাঁড়িয়ে?

না-কি বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে আজীবন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা নিয়েই হৈচৈ করে যেতে হবে?

বিশ্বকাপের শুরু থেকে ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন বাংলাদেশীরা। বাংলাদেশে সাধারণত ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার সমর্থকই বেশি। ব্রাজিল বিদায় নিতেই আর্জেন্টিনার সমর্থকদের সে কী আস্ফালন অনেকটা আবাহনী -মোহামেডান বা ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের সমর্থকদের মতো। একদল হেরে গেলে অন্য দল যেমন উল্লাস করে।

ঘটনা হল, নিকট ভবিষ্যতে বিশ্বকাপ ফুটবলে আমাদের বাংলাদেশের খেলার কোনও সম্ভাবনা নেই। এমনকী চোখে দূরবীন লাগিয়েও সেই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু আমরা বাংলাদেশিরা আছি বিদেশিদের জন্য রাত জেগে, অফিস কামাই করে খেলা দেখার জন্য।

বিদেশিরা জিতবে, আমরা লম্ফঝম্প করব। অফিসে, বাজারে, পাড়ায় -মহল্লায়, চায়ের দোকানে, রাস্তাঘাটে দাঁড়িয়ে এবং মোবাইল ফোনে তর্ক করবে, জিতলে বাজি ফাটাবে -অসুস্থদেরকে জ্বালাতন করবে। প্রয়োজনে অনেকেই অফিসে মিষ্টি খাওয়াবে। আর মাঝে মাঝে বলে উঠবে, বাংলাদেশের কিচ্ছু হবে না।

ফুটবল নিয়ে আরও পড়ুন: মানুষের মন জয় করেছেন লেষ্টার সিটির হামজা চৌধুরী

তারপর আবার বাংলাদেশের লোকজন সব ভুলে যাবে কিম্বা ভুলে যায়। কেউ এটা ভাববে না যে, ৪ কোটি ৬২ লক্ষ জনসংখ্যার দেশ আর্জেন্টিনা এবার নিয়ে তিনবার বিশ্বকাপ ফুটবল জয়ী, ৬ কোটি ৭৫ লক্ষ জনসংখ্যার দেশ ফ্রান্স এবার রানার্স, ৪০ লক্ষ জনসংখ্যার দেশ ক্রোয়েশিয়া তৃতীয় এবং ৩৮ লক্ষ জনসংখ্যার দেশ মরক্কো চতুর্থ, অথচ ১৮ কোটির বাংলাদেশ কেন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার সুযোগই পায় না। ভাবব না, আমাদের বাংলাদেশের ক্রীড়াসংগঠনগুলির হালচাল নিয়ে।

বিশ্বকাপ ফুটবল মিটেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর উত্তাপ অনেকটা কমলেও, এ নিয়ে যুব সমাজের মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ আলোচনা হয়। যাদের প্রিয় দল জিতেছে তারা উচ্ছ্বসিত হয়ে আছে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, অন্য দলের সমর্থকদেরকে তাচ্ছিল্য করা, আঘাত করা – সেটা কি ভাল? খেলোয়াড়োচিত? দেখতে পাচ্ছি একটা প্রচ্ছন্ন প্রতিশোধ স্পৃহা। চারদিকে দেখতে পাচ্ছি, এবং শুনতে পাচ্ছি বিস্তর গত দেড় মাস ধরে চারদিকে ফুটবল -আলোচনা। পাড়ার লোকজন, চায়ের দোকানদার, মুদির দোকানি, রিকসাওয়ালাদের অনেকেই হয়ে উঠেছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞ। পুরো বিশ্বকাপ সিজনটা যেন উৎসব মুখর হয়েছিল আমাদের গোটা বাংলাদেশে। আবার চার বছর পর বসবে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। ততদিনে কি বাংলাদেশের বাংলাদেশি ফুটবলের কোনও অগ্রগতি হবে?

Share on:

লিয়াকত হােসেন খোকন ১৯৫৩ সালের ১৪ মার্চ পিরোজপুর শহরের রায় বাহাদুর রোডে (আদর্শপাড়া) ‘স্মৃতি ভবনে’ জন্মগ্রহণ করেন । পিতা মৃত আমির হােসেন মিয়া এবং মাতা মৃত্যু আমেনা খাতুন | লেখক ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভের পর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার ইতি টানেন । ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত, সহধর্মিণী শওকত আরা ডলি । ১৯৯৬ সালে তার লেখা বাংলাদেশ ভ্ৰমণ পুস্তিকাটি প্রকাশিত হয় হাক্কানি পাবলিশার্স থেকে । তার দ্বিতীয় গ্ৰন্থ ৬৪ জেলা ভ্ৰমণ অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে বের হয় ২০০৭ সালে । ২০০৮ সালে প্রকাশ হয় তাঁর তৃতীয় গ্রন্থ ভারত নেপাল ভূটান ভ্ৰমণ । ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের প্রতিটি প্রদেশ তিনি ঘুরে দেখেছেন । বাংলাদেশের সংবাদপত্রে ভ্রমণ বিষয়ক লেখা জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে লিয়াকত হোসেন খোকনের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। এছাড়া দুই বাংলার চলচ্চিত্র বিষয়ে তিনি অন্যতম সেরা লেখক।