ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪৯৮ রানের সর্বোচ্চ স্কোর এখন ইংল্যান্ডের

অল্পের জন্য পাঁচশ রান হল না ইংল্যান্ডের। ২ রান কম। নাহলে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মত পাঁচশ রানের স্কোর গড়ার রেকর্ডের অধিকারী হত ইংল্যান্ড!

নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৯৮ রানে থামে ইংল্যান্ডের রানের পাহাড়। একসময় ৪০০ রানকেই যখন পাহাড় মনে করা হত। সময়ের ব্যাবধানে এখন ৫০০ রানের দিকে ধাবিত হচ্ছে দলীয় স্কোর। সবচেয়ে বড় দুটি স্কোরই এখন ইংল্যান্ডের দখলে।

টসে হেরে নেদারল্যান্ড ব্যাটিংয়ে পাঠায় ইংল্যান্ডকে। সিদ্ধান্তটি যে অনেকদিন আফসোসে রাখবে নেদারল্যান্ডের অধিনায়ককে তা না বললেও চলে! যদিও দ্বিতীয় ওভারেই নেদারল্যান্ড সাফল্য লাভ করেছিল জেসন রয়কে ফিরিয়ে দিয়ে।

এরপর ইংল্যান্ডের একচ্ছত্র আধিপত্যের গল্প। ক্যারিয়ারের মাত্র চতুর্থ একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমে প্রথম সেঞ্চুরীর পথে সাবলীল ব্যাট করলেন ফিল সল্ট। মাত্র ৯৩ বল খেলেছেন। ১৪টি চার আর ৩ ছক্কায় ১৩১।১৮ ষ্ট্রাইক রেটে থেমেছেন ১২২ রানে।

Phil Salt

ওয়েলসে জন্ম নেয়া এই ইংলিশ উইলোবাজের বেড়ে ওঠা ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বার্বাডোজে। সেখানে থাকতেই ফুটবল ছেড়ে ক্রিকেটে আসক্তি। এরপর ইংল্যান্ডের ক্রিকেট একাডেমীগুলোর পরিচর্যায় পেয়েছেন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের মন্ত্র। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগামী বছরগুলোতে  নিজের ক্যারিয়ার অনেক দূর এগিয়ে নেয়ার সুযোগ এখন তার সামনে।

ওয়ানডাউনে নেমে ডেভিড মালান খেলেছেন তার স্বভাবসিদ্ধ ব্যাটিংয়ের ঝলক দেখিয়ে। মাঝে মাঝে ওপেনিংয়েও নামে মালান। তিনে নেমে করেছেন ১২৫। মাত্র ১০৯ বলের মোকাবেলায়। মালান হাওয়ায় উড়িয়ে মেরেছেন কিছুটা কম। তিনটি ছক্কা। বাউন্ডারি মেরেছেন ৯টি। ষ্ট্রাইকরেট ১১৪.৬৭।

নেদারল্যান্ডের মূল সর্বনাশ করেছেন সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ডের সেরা আক্রমনাত্মক ব্যাটস্ম্যান জস বাটলার। গত আইপিএলে সর্বোচ্চ রান, ছক্কা ও সেঞ্চুরীসহ অনেকগুলো রেকর্ড গড়েছিলেন যিনি। এই ম্যাচেও নিয়ে এলেন সেই ফর্ম।

বাটলার যখন নামেন তখন ইনিংসের আর বাকি বিশ ওভার দুই বল। দলীয় রান ২ উইকেটে ২২৩। মারকাটারী ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ প্ল্যাটফর্ম। বাটলারের মাপের কারো জন্য পয়মন্ত।

Jos Buttler

সুযোগ পুরোপুরিই কাজে লাগালেন বাটলার। মাত্র ৪৭ বলে করেছেন সেঞ্চুরী। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরী। প্রথমটি কার? সেটাও তার নিজেরই। ৪৬ বলে। তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরীর মালিক কে? এখানেও জস বাটলার। ৫০ বলে!

২৭ বলে হাফ সেঞ্চুরী করেছিলেন বাটলার। ৫টি ছক্কা ও দুটি চার সহকারে। পরের ২০ বলে তুলে নিয়েছেন আরও ৫০ রান। ৭০ বলের ইনিংসে ১৬২ রানে থেমেছেন জস বাটলার। ১৪ টি ছক্কা মেরেছেন। চারের সংখ্যা এর অর্ধেক!

England innings

মাত্র একবলের জন্য ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুততম দেড়শ রানের রেকর্ডে ভাগ বসাতে পারেননি বাটলার। এবি ডি ভিলিয়ার্সের রেকর্ডটি ৬৪টি বল মোকাবেলায়। বাটলার দেড়শ ছুঁয়েছেন এক বল বেশি খেলে! অবশ্য এর আগেও দ্বিতীয় স্থানেই ছিলেন জস বাটলার। আগের ইনিংসটি ছিল উইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে ৭৬ বলে।

নেদারল্যান্ডের বোলিং আক্রমনকে দুর্বল অভিধায় আখ্যায়িত করলে ইংল্যান্ডের এই অভাবনীয় ব্যাটিং সামর্থ্যের অবমূল্যায়ন হয়।  ডাচরা ওপেনার জেসন রয়কে এক রানে ফেরানোর পর অধিনায়ক মরগ্যানকে আউট করেছে শুন্য রানে। প্রথম ১০ ওভারে ইংল্যান্ডের রান ছিল ১ উইকেট হারিয়ে ৬৭। পরবর্তী ঝড়ের পূর্বাভাস তখনো বুঝা যায়নি।

আরও পড়ুন: টি-২০ বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরী জস বাটলারের

তবে এই ব্যাটিং টর্নেডোর পিছনে অন্যতম অবদান লিয়াম লিভিংষ্টোনের। ৩০০ ষ্ট্রাইক রেটে ২২ বলে ৬৬ করেছেন লিয়াম। ৬টি করে চার এবং ছক্কা। নেদারল্যান্ডের বোলারদের নির্দয়ভাবে পিটিয়েছেন। এর মধ্য এক ওভারে তুলে নিয়েছেন ৩২ রান। ১৭ বলে করেছেন ফিফটি। ইংল্যান্ডের হয়ে যা দ্রুততম। ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুততম ফিফটি এবি ডি ভিলিয়ার্সের, ১৬ বলে।

এক পর্যায়ের ১৩ বলে ৪৬ রান করেছিলেন লিয়াম। কিন্তু পরবর্তী বলে আউট হওয়ার হাত থেকে বেঁচে গিয়ে পরপর দুটি বল ডট দেন। কিন্তু ১৭তম বলকে হাওয়ায় উড়িয়ে পাঠান সীমানার বাইরে। অল্পের জন্য রেকর্ডবুকে নাম ওঠানো থেকে বঞ্চিত হলেন লিয়াম।

Liam Livingstone

ইনিংসের শেষ দুই বলে ১২ রান নিতে পারলে ইতিহাসে প্রথমবারের মত ৫০০ রানের মাইলফলকে পৌঁছে যেত ইংল্যান্ডের স্কোর। লিয়াম চেষ্টা করেছিলেন। শেষ ওভারের পঞ্চম বল উড়িয়ে মেরেছিলেন। কিন্তু বাতাসের প্রতিকুল বাতাসের প্রবল চাপে সেই বলটি থেকে শেষ পর্যন্ত নিতে পেরেছিলেন চার রান। যদিও শেষ বলটি উড়িয়ে মেরে পেয়েছিলেন ছক্কা। তাই শেষ দুই বলে ১০ রান নেয়ায় ২ রানের আক্ষেপ থেকেই গেল! অল্পের জন্য পাঁচ তারকা স্কোর পেল না ক্রিকেট বিশ্ব!

যদিও বর্তমানে টি-২০ ক্রিকেটের জাদুকরী ছোঁয়ায় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে ক্রিকেট তাতে সেই দিন আর বেশি দূরে নয়।

ওয়ানডে ক্রিকেটে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বড় বিজ্ঞাপন তাদের বিধ্বংসী ব্যাটিং। সাম্প্রতিক ক্রিকেটের বড় স্কোরের রেকর্ডগুলোতে প্রায় নিয়মিতই অংশ নিচ্ছে তারা। এই ধারা আরও কিছুদিন এগিয়ে নিলে ক্রিকেটের প্রতি দর্শকদের আকর্ষণ বাড়তেই থাকবে।

Share on:

সাগরপার প্রতিনিয়ত মৌলিক ও সৃষ্টিশীল কনটেন্ট প্রকাশের মাধ্যমে অন্তর্জালে বাংলার বিশ্বায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফেসবুক এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে আমাদের এই প্রচেষ্টার সাথে আপনিও সংযুক্ত হউন।